Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

দুহাতে কামাচ্ছেন ঘুস

শহীদ আবু সাঈদের সুরতহালে স্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট ঝিনাইদহে

Icon

মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শহীদ আবু সাঈদের সুরতহালে স্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট ঝিনাইদহে

‘টাকা চাইলে কি টাকা পাওয়া যায়? দেশটা কি মগের মুল্লুক। আমার অফিস থেকে বের হয়ে যান। আর ঢুকবেন না।’-কথাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি বলছিলেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বর্তমান ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আহমেদ সাদাত। যিনি রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের সুরতহাল প্রতিবেদনে স্বাক্ষরকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ জানার পরও তা উল্লেখ করা হয়নি। ওই সুরতহাল প্রতিবেদনে গুলিতে মৃত্যুর সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। আহমেদ সাদাতের বিরুদ্ধে সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি, ঘুস আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহ থেকে অপসারণ করা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর করা লিখিত অভিযোগে তার দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৫ জন মালিক। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আহমেদ সাদাত। বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করার খবর জানেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই আসে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আহমেদ সাদাত ও তার জিপ চালক শফিয়ারের বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি, অসদব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন জেলার কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দীন, খয়ের তলা গ্রামের মো. আক্কাচ আলী, মো. শহীদুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, তৌফিক ইসলাম।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জিপ চালকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করে থাকেন ওই কর্মকর্তা। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করে থাকেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা।

অভিযোগকারীদের একজন কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আহমেদ সাদাতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা। দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট আ.লীগের দোসর, বিতর্কিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে অপসারণ করা না হলে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে তিনি জানান।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ঝিনাইদহের বর্তমান ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আহমেদ সাদাত জুলাই আন্দোলনে রংপুরে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ আবু সাইদের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, শহীদ আবু সাঈদের হত্যার মোটিভ পালটে দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটন বেরোবি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই (নিরস্ত্র) বিভূতি ভূষণ রায় তাজহাট থানায় একটি মামলা করেন। এর আগে শহীদ আবু সাঈদের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এসআই (নিরস্ত্র) মো. তরিকুল ইসলাম। সুরতহাল রিপোর্টে প্রতিস্বাক্ষর করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রংপুর মহানগর আহমেদ সাদাত। অভিযোগ, শহীদ আবু সাঈদের শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন থাকলেও প্রকৃত অপরাধীদের আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ জানার পরও সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘মাথায় আঘাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়’-বাক্যটি মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসাবে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

জানতে চাইলে আহমেদ সাদাত যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ছিলাম। পরবর্তীতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) থেকে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আহমেদ সাদাত বিসিএস ৩৭তম ব্যাচে সহকারী কমিশনার হিসাবে প্রথম যোগ দেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখান থেকে রংপুর মেট্রোপলিটন ভূমি অফিসে এসিল্যান্ড হিসাবে যোগ দেন। পরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল যোগ দেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম