রাসেলস ভাইপারের চেয়েও কেউটের কামড়ে মৃত্যু বেশি
৯ মাসে আক্রান্ত ৭৬, মৃত্যু ১৭
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কালাচ বা কেউটে। দেশে যে দু-একটি সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে একটি। সম্প্রতি নানা জায়গা থেকে কেউটের কামড় ও মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সারা দেশে এই সাপের বিচরণ থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এদের উপদ্রব বেশি। চলতি বছর সাপেকাটা রোগীদের মধ্যে কেউটের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা রাসেলস ভাইপারের চেয়েও বেশি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সময়ে সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৬ জন কেউটের কামড়ে আক্রান্ত। এর পরের অবস্থানে আছে রাসেলস ভাইপারে কাটা ৫০ জন। তৃতীয় অবস্থানে কোবরার কামড়ে ৪৯ জন। অনেক সময় কোবরা ও কেউটের কামড় নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যায়। এমন রোগীর সংখ্যা ৩১ জন। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে কেউটের কামড়ে মারা গেছেন সর্বোচ্চ ১৭ জন। অন্যদিকে রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন এবং কোবরার কামড়ে ৫ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মে থেকে এ পর্যন্ত কেউটে কাটা চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনই এসেছেন সন্দ্বীপ থেকে। চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরেছেন তিনজন। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতি সবচেয়ে বিষধর। কেউটে এর মধ্যে অন্যতম। কয়েক প্রজাতির কেউটে রয়েছে। এর মধ্যে বেশি দেখা যায় পাতি কেউটে। দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও এ প্রজাতির কামড়ে। এগুলোর দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। গায়ের রং সাধারণত কালো বা নীলচে কালো। সারা দেহে কম-বেশি সাদা ফিতার মতো দাগ থাকে।
কেউটের আরেকটি প্রজাতি পাতি কাল কেউটে। এরাও অত্যন্ত বিষাক্ত। আরেকটি প্রজাতি ব্যান্ডেড কেউটে বা শঙ্খিনী। এরা কেউটে সাপের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ। প্রায় ৭ ফুট পর্যন্ত হয়। এদের কালো গায়ে হলুদ ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে এদের দেখা যায় খুব কম। সাধারণত এরা মানুষ এড়িয়ে চলে। এরা অন্য সাপও খায়। আরেকটি জাত লেজার ব্ল্যাক কেউটে বা কৃষ্ণকালাচ। এরা অত্যন্ত ক্ষিপ্র ও বিষধর।
কেউটে মূলত নিশাচর সাপ। দিনে এরা সাধারণত ঝোপঝাড় বসতবাড়ির অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। রাতে ব্যাঙ, ইঁদুর ইত্যাদি খাবারের খোঁজে বের হয়। এরা ঘরবাড়ির ভেতরে ঢুকে মানুষের বিছানায় পর্যন্ত চলে আসে এবং কামড় দিয়ে বিষ ঢেলে চলে যায়। অনেক সময় কামড়ের পর মশার কামড়ের মতো সামান্য অনুভূত হয়। মাঝে মাঝে সেটাও হয় না। ব্যথাহীন থাকে। মুহূর্তে এই সাপ ২০ মিলিগ্রাম নিউরোটক্সিন বিষ শরীরে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয় যা একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এই বিষ মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে। প্রথমে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশি কাজ করে না। সঠিক চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু অনিবার্য।
কেউটের কামড়ে প্রথম কয়েক ঘণ্টা রোগীর দেহে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে ছোবলের ৬ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পাকস্থলী এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জোড়াগুলোতে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হতে দেখা যায়। অনেকে নীরবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বিশেষ করে বর্ষা ও শরতে কেউটে বেশি সক্রিয় থাকে। এই ভয়ংকর সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু শাহীন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কেউটে সাধারণত রাতে কামড়ায়। যেসব এলাকায় এই সাপের উপদ্রব বেশি বা যেসব এলাকায় বন্যার প্রাদুর্ভাব বা পানি জমা আছে সেসব এলাকার বসবাসকারীরা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন। মশারি এমনভাবে দিতে হবে যাতে সাপ কোনোভাবেই বিছানার ভেতরে ঢুকতে না পারে। আর সাপে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
