খুলনায় ‘আওয়ামী স্টাইলে’ বিটাক চালাচ্ছেন মোর্শেদ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রে (বিটাক) খুলনা কার্যালয়ে চলছে ‘হযবরল’ অবস্থা। ৫ আগস্টের পরও কোনো প্রভাব পড়েনি বিটাকে। ১৮ বছর ধরে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে চাকরি করছেন বর্তমান অতিরিক্ত পরিচালক (এডি) এম মোর্শেদ আলম। তার সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গোপালগঞ্জের মোর্শেদ এখনো ‘আওয়ামী স্টাইলেই’ কাজ করে যাচ্ছেন।
‘যুগান্তর’-এর অনুসন্ধানে খুলনা বিটাকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। মোর্শেদ আলমের মামাতো ভাই আবিদকে দিয়ে ‘নারীদের মোবাইল সার্ভিসিং’ নামে একটি ট্রেড পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই মামাতো ভাইয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তার গাড়িচালক জামিলের প্রভাবও কোনো অংশে কম নয়। জামিলের শ্যালককে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে বিটাকের অভ্যন্তরের ক্যান্টিন। জামিল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওয়াইফাই সেবার নামে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এমএলএসএস পদে জান্নাতি নামে এক নারী কাজ করছেন, যেখানে ফিরোজা বেগমের নিয়োগ রয়েছে। বিষয়টি বিটাকের প্রশাসনিক কর্মকর্তাও জানেন।
আরও জানা যায়, সরকারি অনুমতি ছাড়া বিটাকে গাছ কাটা, বিভিন্ন গাছের টুকরা টেন্ডার ছাড়া বিতরণ, সিকিউরিটি গার্ড আলমগীরকে দিয়ে স্টুডেন্ট ভর্তির বিষয়ে সুপারিশ, নারী হোস্টেলে ছেলে-মেয়ে একত্রে নাচগান করা, প্রতি ব্যাচে আবাসিক ছেলে ও মেয়েদের পোশাকের টেন্ডার নিয়ে ধূম্রজাল, কর্মচারীকে মানসিক টর্চারসহ নানা অপকর্মের পেছনে রয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক।
শুধু তাই নয়, বিটাকে সিবিএ নেতাদের প্রভাবও বেশ প্রবল। সিবিএ কোষাধ্যক্ষ মাসুমা খাতুন আবার অতিরিক্ত পরিচালকের খুবই আস্থাভাজন, প্রিয়পাত্র। তিনি মূলত ড্রাফটসম্যান হলেও কাজ করেন প্রশাসন বিভাগে। সিবিএ সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ এবং বিটাকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান শিকদারের সঙ্গে রয়েছে খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তারা দুজনই অবশ্য এই প্রতিবেদককে জানান, সরকারি অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা হয়নি, তবে ঝড়ের কারণে কিছু গাছের ডাল কাটা হয়েছিল। তারা আরও জানান, গাছের কিছু গুঁড়ি ও কাটা অংশ মাস্টার রোলের একজন বয়স্ক কর্মচারীকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ক্যান্টিনের বিষয়ে তারা বলেন, আশপাশে কোথাও কোনো দোকান না থাকায় এটা বসানো হয়েছে।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী এলাকার সন্তান এম মোর্শেদ আলম ২০০৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিটাকে যোগদান করেন। খুলনা বিটাকে তিনি বদলি হয়ে আসেন ২০০৭ সালে। এরপর ১৮ বছর ধরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানেই আছেন। তিনি খুলনায় আসার পর বেশ কয়েকটি পদোন্নতি পেয়েছেন। তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার শিলার সখ্য ছিল। খুলনার দিঘলিয়ায় শিলার বাড়ির পাশেই মোর্শেদ আলমের বাড়িসহ অনেক জমি রয়েছে। তার সন্তান রুয়েটে লেখাপড়া করে। তাই তিনি বগুড়া বিটাকে বদলির জন্য উঠেপড়ে তদবির শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে বিটাকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহাপরিচালকের কাছে মোর্শেদ আলমের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
বিটাকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান শিকদার ‘যুগান্তর’কে বলেন, ফিরোজা বেগম অসুস্থ থাকায় জান্নাতি তাকে নিয়ে আসেন এবং দিয়ে যায়। সে কাজ করে না বলে তিনি দাবি করেন।
বিটাকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুল হক রাসেল জানান, আবাসিকে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় ইজিপিতে টেন্ডারের মাধ্যমে দেওয়ার কথা রয়েছে। তার আসলে জানা নেই এতদিন কীভাবে দিয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছেন। নারী হোস্টেলে একত্রে নাচানাচির বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে ঊর্ধ্বতন স্যাররা উপস্থিত ছিলেন। সিকিউরিটি গার্ড আলমগীরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সখ্যের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। মাসুমা খাতুনকে প্রয়োজনে প্রশাসনে কাজে লাগানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মোর্শেদ আলম ‘যুগান্তর’কে বলেন, আবিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ রয়েছে। যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাকে নেওয়া হয়েছে। ড্রাইভারকে দিয়ে ক্যান্টিন চালানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওয়াইফাইয়ের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা নয় বলে তিনি জানান। এছাড়া অন্য সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের মহাপরিচালক পরিমল সিংহ ‘যুগান্তর’কে জানান, খুলনা বিটাকের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন।

