Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

গেরদায় প্রথম গদি স্থাপন শাহ আলী বাগদাদীর (রহ.)

এখানে শায়িত রয়েছেন তার দুই ছেলে

জাহিদ রিপন

জাহিদ রিপন

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গেরদায় প্রথম গদি স্থাপন শাহ আলী বাগদাদীর (রহ.)

পাঁচশ বছর আগে হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) ও তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে অবস্থান নেন ফরিদপুরের ঢোল সমুদ্রপারের নিভৃত গেরদা গ্রামে। ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সাত কিলোমিটার দূরে এ গ্রামটির অবস্থান। শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) ও তার অনুসারীদের রেখে যাওয়া কিছু নিদর্শন এখনো রাখা আছে এই গেরদা গ্রামের মসজিদে। এ মসজিদে রক্ষিত ইসলামিক নিদর্শনগুলো এখনো অনেকেরই অজানা। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র মুই বা দাড়ি মোবারক, হাসান-হোসেনের জুলফ মোবারক, বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর ব্যবহৃত পোশাক (ফতুয়া, আভা), শাহ আলী বাগদাদীর খাবারের বর্তন (চন্দন কাঠের তৈরি) থালা, মাছের দাঁতের তসবি, জায়নামাজ, পাগড়ি। এছাড়াও অন্য বুজুর্গ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত নানা জিনিস।

স্থানীয় বয়স্করা এবং শাহ আলী বাগদাদীর ১২তম বংশধর সৈয়দ সেলিম আলী বলেন, আমার দাদা এবং বাবার কাছ থেকে শুনেছি ৯০০ হিজরিতে ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে শাহ আলী বাগদাদী (রহ.), তার ভগ্নীপতি, আত্মীয়স্বজন, অনুসারীসহ বাগদাদ থেকে দিল্লি হয়ে ফরিদপুরের তৎকালীন ঢোল সমুদ্রের তীরবর্তী এ গেরদা গ্রামের জঙ্গলে আগমন করেন। ঢোল সমুদ্রপারের এ জঙ্গল পরিষ্কার করে তিনি সেখানে প্রথম গদি স্থাপন করেন। ধারণা করা হয়, এই গদি শব্দ থেকেই গৃদা এবং পরবর্তী সময়ে ‘গেরদা’ নামের উৎপত্তি হয়। ঢোল সমুদ্রের পারেই এ গেরদা গ্রামটির অবস্থান। এখানে আগমনের প্রায় একশ বছর পর আনুমানিক ১০১৩ হিজরিতে এ গেরদা গ্রামে ছোট পরিসরে তিনি একটি মসজিদ স্থাপন করেন। এ মসজিদে উর্দু ভাষায় লেখা এক শিলালিপি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এ স্থান থেকে আউলিয়াদের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। কথিত আছে, হিজরি ১০১৩ সনে প্রাচীন মসজিদটি জনৈক আজল খাঁ নির্মাণ করেছিলেন। এ আজল খাঁ কে ছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে প্রাচীন সেই মসজিদটি এখন আর নেই। শোনা যায়, পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মসজিদটি। তবে সেই মসজিদের মূল্যবান বেলে পাথরের অংশবিশেষ আজও রয়েছে মসজিদের প্রাচীরের দুটি ফটকে। পুরোনো সেই মসজিদের একটি শিলালিপিরও বর্তমান মসজিদের দেওয়ালে দেখতে পাওয়া যায়। সেখান থেকেই ধারণা পাওয়া যায় মসজিদটির বয়স। এছাড়াও মসজিদে রক্ষিত রয়েছে পাঁচটি মূল্যবান নিদর্শন, যা বছরে পাঁচ দিন অত্যন্ত তাজিমের সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ফাতেহা ইয়াজদাহম বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর ওফাত দিবসে, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবেবরাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা-এই পাঁচ দিন। তাছাড়া বিশেষ ব্যক্তির অনুরোধে মাঝেমধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ নিদর্শনগুলো মুসল্লিদের দেখানো হয়ে থাকে।

ঢোল সমুদ্রপারে ১০ হাজার বিঘা সীমানা নিয়ে অবস্থান ছিল শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)-এর। তার চার ছেলে শাহ ওসমান, শাহ হানিফ, শাহ হামজা ও শাহ (নাম অজানা)। এ চার স্নেহধন্য সন্তানের মধ্যে শাহ হানিফ ও শাহ হামজা এ গেরদা গ্রামে শায়িত রয়েছেন। শাহ হানিফের মায়ের নাম বুজগী বিবি। আর অন্য দুই ছেলে ঢাকার মিরপুরে শাহ আলী বাগদাদীর মাজার প্রাঙ্গণে সায়িত রয়েছেন বলে শোনা যায়। অনেকেই হয়তো জানেন না ঢাকার মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এই গেরদা গ্রাম থেকেই সেখানে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই মারা যান। তবে তার স্বজনরা অনেকেই গেরদায় রয়ে যায় এবং তার বংশধরদের কবর আজও এই গেরদায় রয়েছে। মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে তার বংশধরদের কবর দেওয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান প্রাচীন গেরদা মসজিদের স্থানে ১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন নতুন একটি মসজিদ। তবে ঐতিহাসিক গেরদা মসজিদের অংশবিশেষ আজও বিদ্যমান। এখনো পুরোনো পাথরের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখেন দর্শনার্থীরা আর পাঁচশ বছরের পুরোনো গেরদা মসজিদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন। মসজিদের উত্তরদিকে অবস্থিত রয়েছে বেশকিছু পুরোনো কবর। কবরের সামনেই রয়েছে শতবর্ষী কাঁঠালগাছ। মসজিদটির চারপাশে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে অনুমান করা যায় একসময় এখানে ঘন জঙ্গল ছিল। মসজিদের খুব কাছেই পদ্মার একটি শাখা নদী বয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, পদ্মার নদীভাঙনের কারণে প্রাচীন গেরদা মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মসজিদ ছাড়াও এখানে শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)-এর অনুসারী এবং তার বংশধরদের বাড়িও ছিল। তবে সেগুলোর তেমন চিহ্ন নেই। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন পর্যটকরা আসেন। অনেকে মানত করে ছাগল, মুরগি ও টাকাপয়সা দান করার চেষ্টা করেন। তবে এখানে দান গ্রহণ করা হয় না বলে জানান এখানকার মুসল্লিরা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম