Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজে গৃহবধূর লাশ

নেপথ্যে পরকীয়া সন্দেহ ও সম্পত্তির লোভ

ইমন রহমান

ইমন রহমান

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নেপথ্যে পরকীয়া সন্দেহ ও সম্পত্তির লোভ

রাজধানীর কলাবাগানে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তারকে (৪২) হত্যা করে লাশ বাসার ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখে স্বামী নজরুল ইসলাম (৫২) পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশের ধারণা। স্বজনদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ‘তাসলিমা পরকীয়ায় জড়িত’-এমন সন্দেহ ও তার বাবার বাড়ির সম্পত্তির লোভ। হত্যার পর লাশ লুকালেও ফ্ল্যাটের শয়নকক্ষের দেওয়ালের ছোপ ছোপ রক্তের দাগের সূত্র ধরে ফ্রিজের মাছ-মাংস সরিয়ে লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন বলছে, তাসলিমার কপাল ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। তাসলিমা-নজরুল দম্পতির তিন মেয়ে রয়েছে। আরও জানা গেছে, প্রতিদিন ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে দরজায় চারটি তালা মেরে যেতেন নজরুল। মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বামী নজরুল তাসলিমাকে হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে, বিছানার চাদর দিয়ে প্যাঁচিয়ে ফ্রিজে লুকিয়ে রেখে নিজে গাড়ি চালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

সোমবার রাতে রাজধানীর কলাবাগানের ১ম লেনের ২৪ নম্বর বাসার ৬/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় গৃহবধূ তাসলিমার লাশ। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডটি রোববার রাতে ঘটেছে বলে ধারণা পুলিশের। লাশের মাথা ও মুখে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে, নিহতের ডান চোখের ওপরে আড়াআড়ি ১১ ইঞ্চি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মাথার ডানপাশে ও মাঝখানে পাঁচ ইঞ্চি করে ক্ষত রয়েছে। কপালেও ক্ষত রয়েছে। মাথার বেশির ভাগ অংশে মগজ বের হয়ে গেছে। তাসলিমার ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে তাসলিমার স্বামী নজরুল ইসলামকে।

কলাবাগান থানার ওসি ফজলে আশিক যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে এ হত্যাকাণ্ড। স্ত্রী পরকীয়া করে এমন সন্দেহ করত নজরুল। এটা নিয়ে সব সময় গণ্ডগোল লেগে থাকত। আমরা ধারণা করছি বাচ্চারা রাতে পাশের রুমে ঘুমিয়ে যাওয়ার পরই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম তেমন কিছু করেন না। ব্যাংকে কিছু টাকা আছে, সেখান থেকে ইন্টারেস্ট তুলে সংসার চালাতেন। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান ওসি।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগানের বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। আটতলা ভবনের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা। বাড়িটির নিরাপত্তা প্রহরী বাবুল হাওলাদার যুগান্তরকে জানান, চার মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন নজরুল। সে সময় পরিচয় দেন তিনি কাপড়ের ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, নজরুল মাদকাসক্ত। নানা ধরনের মাদক সেবন করে বাসায় ফিরতেন। স্ত্রীকে বাসা থেকে বের হতে দিতেন না। মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে দিতেন না। তাসলিমার সঙ্গে ২০০৪ সালে নজরুলের বিয়ে হয়। তাদের তিন মেয়ে রয়েছে। তাদের বয়স ১৯, ১৬ ও ৫। গত ২১ সেপ্টেম্বর নজরুল শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তাসলিমার নামে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাতে অসম্মতি জানালে তিনি রাগ করে পরিবারসহ ঢাকায় ফিরে যান এবং পরে স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির কাউকে যোগাযোগ করতে দেননি।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ অক্টোবর রাত ১১টার সময় নজরুল ও তাসলিমা রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে তাদের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ১৩ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে এক মেয়ে ঘুম থেকে উঠে বাবা-মায়ের রুমের দরজা নক করে। তখন বাবা নজরুল ইসলাম মেয়েকে বলেন, ‘তোমার মা অন্য পুরুষের সঙ্গে রাতে বাইরে চলে গেছে। তোমরা দুই বোন গুছিয়ে নাও, তোমাদের নানা-নানির বাড়িতে রেখে আসব।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম