Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: খুলনা-৫ আসন

জামায়াতের পরওয়ারের মাঠে বিএনপির লবী

Icon

আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জামায়াতের পরওয়ারের মাঠে বিএনপির লবী

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মোহাম্মদ আলী আসগর লবী। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের তৎপরতায় ভোটের মাঠ এখন সরগরম। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পিছিয়ে নেই বিএনপির প্রার্থী বিসিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী আসগর লবী। তবে এবার পরওয়ারের তৎপরতা, গণসংযোগ ও তৃণমূলের সাড়া নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।

খুলনা-৫ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচিত হন। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ নির্বাচিত হন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরওয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘ কারাজীবন ও মামলার ঘেরাটোপ পেরিয়ে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় দাঁড়িপাল্লার পক্ষে একাধিক বড় জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। লোক উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে জামায়াত আলাদা জনসভা করেছে।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে আমাদের পাশে জনগণ আছে। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ফুলতলা ও ডুমুরিয়ায় প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আগামীতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সন্ত্রাস, দখলদারী, দুর্নীতি ও বেকারত্বমুক্ত সমৃদ্ধ জনপদ গড়ব।

ফুলতলা উপজেলার বাসিন্দা গোলাম পরওয়ার ছাত্রজীবনে শিবিরের মহানগর সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় তিনি সাংবাদিকতা করতেন। জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি নগর আমির ছিলেন প্রায় এক যুগ। এরপর তিনি কেন্দ্রে চলে যান।

এ আসনে আলী আসগর লবীকে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষের প্রচার গুটিয়ে নিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত লবী এর আগে খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ২০০৯ সালে কারামুক্তির পর বেশির ভাগ সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় থাকতেন। খুলনায় আসতেন কম। আসলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি দেখা-সাক্ষাৎ করতেন না। রাজনীতির মাঠে একটা লম্বা সময় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৯ সালে রাজনীতি থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর খুলনার রাজনীতিতে লবী আবার সক্রিয় হন। খুলনা-৫ আসনে দলের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর চলতি বছরের জুন থেকে তিনি মাঠে। প্রতিদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছোট-বড় সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।

আলী আসগর লবী বলেন, প্রতিপক্ষ কে সেটা আমার ভাবনার বিষয় নয়। খুলনা-৫ আমার নিজ এলাকা। মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে চাই। জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক উন্নয়ন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারকে আমি অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলের ডুমুরিয়া উপজেলা সহসভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, আমরা ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি ও কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের সমর্থন চাই। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুফতি কাইয়ুম জমাদ্দার নিজ প্রতীকে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার ও বিএনপির প্রার্থী আলী আসগর লবীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ভোট ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এসব ভোট যিনি টানতে পারবেন তিনিই জয়ী হবেন।

ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ও ফুলতলা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন এবং গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে খুলনা-৫ আসন গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০৩ জন। এর মধ্যে ডুমুরিয়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮১ এবং ফুলতলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৮ জন। হিন্দু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫০টি এবং বুথ ৭৮২টি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম