কুমিল্লা-৬ আসন
মাঠ ছাড়বেন না ইয়াছিন অনুসারীরা, সমঝোতার আহ্বান মনিরের
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লা-৬ (সদর-সদর দক্ষিণ) সংসদীয় আসনে মাঠ ছাড়বেন না মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের অনুসারীরা। তাদের দাবি কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতা মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইয়াছিনকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলন করে আসছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। এদিকে ইয়াছিনের সঙ্গে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। অপরদিকে বিষয়টির আলোচনায় সুরাহা না হলে নগরীতে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্মূল্যায়ন করা হতে পারে।
জানা গেছে, ১৭ বছর কুমিল্লা সদর আসনের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ইয়াছিন। সদর আসনে তাকে বিএনপির দুর্দিনের কাণ্ডারি বলা হয়। সম্প্র্রতি আসন পুনর্বিন্যাসে কুমিল্লা-১০ আসন থেকে সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে ওই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা-৬ আসনে যুক্ত হন এবং গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকেই মনোনয়ন লাভ করেন। এদিকে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণায় হতবাক হয়ে পড়েন ইয়াছিনের অনুসারীরা। ইয়াছিনকে দলীয় মনোনয়ন না দিলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানান তারা।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন মনিরুল। তিনি ইয়াছিনের সঙ্গে সমঝোতায় প্রস্তুত বলে জানান। ইয়াছিনের সব কর্মী-সমর্থককে মূল্যায়নের ঘোষণাও দেন তিনি। মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা এবং তার অনুসারীরা এখন মুখোমুখি অবস্থানে।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই নেতার মধ্যে সমঝোতা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এতে নগরীতে সংঘাত সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং কোন্দলের সুযোগ নিতে পারে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো।
এদিকে ইয়াছিন যুগান্তরকে বলেছেন, দলের মহাসচিব বলেছেন, এটা ফাইনাল মনোনয়ন নয়। পরিবর্তন হতে পারে। কুমিল্লা সদর আসনের মনোনয়ন পরিবর্তন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, ১৭ বছর দল এবং নেতাকর্মীদের জন্য আমি কি করেছি এটা সবাই জানে। এই মনোনয়নে আমার কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে মনিরুল বলেন, ইয়াছিন দলের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন, এটা সত্য। আমিও দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমি সংঘাত সহিংসতা চাই না। যেহেতু দল আমার ত্যাগ এবং শ্রমের মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমি দলের স্বার্থে ইয়াছিনের সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, বিএনপির স্বার্থে আমাদেরকে এক হতে হবে। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য।
নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন: কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দুপুরে নগরীর টাউন হল মাঠের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এর আয়োজন করেন ১৭ বছরে রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুব চৌধুরীর স্ত্রী নাসরিন খানম।
তিনি বলেন, এক যুগেরও বেশি কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপি সমর্থন করার কারণে বহু পরিবারের স্বামী, বাবা, ভাই ও সন্তানেরা মামলা-হামলা, কারাবরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। সেই কঠিন সময়ে এসব পরিবারের পাশে থেকে আইনি সহায়তা, আটক নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের ভরণপোষণ, আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসনসহ মানবিক সহায়তা দিয়েছেন আমিনুর রশিদ ইয়াছিন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্দেশে দাবি জানানো হয়, কুমিল্লা বিএনপির দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের অভিভাবকের ভূমিকা রাখা ত্যাগী নেতা ইয়াছিনকে চূড়ান্তভাবে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হোক। এসময় গত ১৭ বছরে রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারের তিন শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

