সিআইডির পরিসংখ্যান
সাইবারজগতে শীর্ষে আর্থিক অপরাধ
ছয় মাসে ভুক্তভোগী ১ হাজার ৮১৩ জন * বেড়েছে হয়রানি, অ্যাকাউন্ট হ্যাক ও সিম ক্লোনের ঘটনাও
আসাদুল্লা লায়ন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সাইবারজগতের নানা মাধ্যম জীবনকে ত্বরান্বিত করেছে। আবার এটি নিরাপত্তাহীনতাও তৈরি করেছে। ফলে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। এর মধ্যে শীর্ষে আর্থিক বা বাণিজ্যসংক্রান্ত অপরাধ। ই-কমার্স কিংবা ইনভেস্টমেন্ট সাইটের মতো নানা মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ এখন বিস্তৃত। গবেষণার তথ্য বলছে, আগে সাইবার অপরাধীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশৃঙ্খলা কিংবা অরাজকতা সৃষ্টি করা। তবে এখন তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থের জন্য হামলা চালাচ্ছে বা ফাঁদ তৈরি করছে। ভুক্তভোগীর অর্থ চুরি বা মুক্তিপণ আদায়ই তাদের মূল লক্ষ্য।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সম্প্রতিক সময়ে সাইবার স্পেসে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ই-কমার্স প্রতারণা। এরপর রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাপ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনা। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) সারা দেশ থেকে গত ছয় মাসে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। সিপিসির ফেসবুক পেজ ও হটলাইনে নম্বরে করা এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার অপরাধে জড়িত বহু চক্রের সদস্যকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছয় মাসে সাইবার অপরাধের শিকার ৩ হাজার ৭৬৬ জন ভুক্তভোগী সিপিসিতে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণার শিকার ১ হাজার ৮১৩ জন। অনলাইন প্রতারণার তথ্যে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ই-কমার্স মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন ৭৪৩ জন, ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাপে পড়েছেন ৫৪৪, লোনের ফাঁদে ৬৪ এবং সেবা নিতে গিয়ে ট্র্যাপে পড়েছেন ১১৫ জন। এছাড়াও এনআইডি ইস্যুতে ১৭, ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত কাজে ১৩ জন অর্থ খুইয়েছেন।
আর্থিক প্রতারণার পরই রয়েছে অনলাইনে হয়রানির অভিযোগ। ছয় মাসে ৯৫৪ জন অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে পোস্ট, মেসেজ ও ছবি-ভিডিওর মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন ৮০২ জন। এছাড়াও মিথ্যা তথ্যে ৬১, ব্যক্তিগত তথ্য প্রচারে ১২ এবং অন্যান্যভাবে ৭৯ জন। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী ২৮২, ব্ল্যাকমেইলের শিকার ১৯৭, সিম ক্লোন ১৬৫ জনের এবং অন্যান্য অভিযোগ ১৮২টি।
সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) জসীম উদ্দিন খান যুগান্তরকে জানান, গত জুন থেকে সিপিসিতে যোগাযোগ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৫ জনের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৫৫২ জনকে। সিআইডির এই কার্যক্রম ২০২০ সাল থেকে সার্বক্ষণিক চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯৬ জন সংস্থাটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও হটলাইনে অভিযোগ করেছেন। এদিকে আমেরিকান সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যান্ডিয়ান্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২৪ সালে ৫৫ শতাংশ সাইবার হামলাই হয়েছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনই উচিত নানা উৎস থেকে নিয়মিত হুমকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
