তুলা চাষে সম্ভাবনার হাতছানি
যশোর অঞ্চলে ২৬শ’ কৃষক প্রণোদনার আওতায়
ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথনগর গ্রামে খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তুলা চাষি। সম্প্রতি তোলা ছবি -যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে চাহিদার সিংহভাগ তুলা আমদানি করতে হয়। খুবই কম পরিমাণে তুলা চাষ করেন দেশের কৃষকরা। তাই তুলার চাষ বৃদ্ধি করে আমদানি-নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে বীজ, সার ও কীটনাশকসহ প্রণোদনা দিচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। লাভজনক হওয়ায় যশোর অঞ্চলে বেড়েছে তুলার আবাদ। তবে দাম নিয়ে রয়েছে চাষিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, এ বছর যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে যশোরে ১৩ হাজার কৃষক ৩৯০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছে। যশোর জোনে দুই হাজার ৬শ’ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এ বছর সরকারি প্রণোদনা, অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় বাম্পার ফলনে আশাবাদী চাষিরা। অন্য ফসলের তুলনায় তুলা চাষ লাভজনক। উৎপাদন খরচ বাদে তিন-চার গুণ লাভ হয়। যদিও সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট অনেক কৃষক। তারা দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথনগর গ্রামের তুলা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে ১৪-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় খরচ বাদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। লাভজনক হওয়ায় তুলা চাষ করছি। একই এলাকার তুলা চাষি আমিনুর রহমান বলেন, এ বছর ২২ শতক জমিতে তুলা চাষ করেছি। সরকারি প্রণোদনার ৩০ কেজি ডিএপি, ৩৫ কেজি পটাশ, ১৪ কেজি ইউরিয়া, ৬শ’ গ্রাম বীজ ও কীটনাশক পেয়েছি। সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় উপকৃত হয়েছি। আবহাওয়া অনুকূল ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ভালো ফল এসেছে।
আরেক চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা তুলা চাষ করতেন। এখন আমি চাষ করছি। তুলা চাষে ৮ মাস সময় লাগে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা। চাষ দীর্ঘমেয়াদি, তাই দাম আরও বৃদ্ধি করতে হবে। নইলে কৃষকদের উপকার হবে না। তিনি আরও বলেন, তুলা চাষের একটা সুবিধা খেত থেকেই বিক্রি করা যায়। বাজারে নিতে হয় না। বাড়িতে বসেই ফসলের দাম পাই।
যশোরের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, যশোর জোনের ২৬শ’ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনেছি। কৃষকের মধ্যে তুলা চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার ফলনও বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, আমদানি-নির্ভরতা কমাতে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ ও চারা তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশে ছড়িয়ে দিতে যৌথভাবে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারিভাবে প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত তুলার মান খুবই ভালো। চাষ সম্প্রসারণে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমীন বলেন, চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভালোমানের বীজ সরবরাহ করছি। কৃষকরা যাতে নায্যমূল্য পায়, সেই কাজটি করছে বোর্ড। চলতি মৌসুমে সারা দেশে ১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। মোট প্রণোদনার সিংহভাগই যশোর জোনের তুলা চাষিরা পেয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন সদস্য অধ্যাপক এ এস এম গোলাম হাফিজ বলেন, দেশে তুলা উৎপাদন চাহিদার দুই শতাংশ মাত্র। বাকি তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে গার্মেন্টপণ্য ৮৩ থেকে ৮৫ শতাংশ রপ্তানি করে দেশের চালিকাশক্তি ধরে রেখেছে; সেটার কাঁচামাল হলো তুলা। সেই তুলা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। তাই সরকারের কাছে আমার পরামর্শ, কৃষি ঋণের নীতিমালা পরিবর্তন করে তুলা চাষিদের জন্য আলাদা একটি ঋণের ব্যবস্থা করুন।

