Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

খুলনা ১ ও ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী

শীর্ষ পদ হারানোর পর এজাজ বাপ্পী’র মনোনয়নে চমক

নূর ইসলাম রকি

নূর ইসলাম রকি

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শীর্ষ পদ হারানোর পর এজাজ বাপ্পী’র মনোনয়নে চমক

আমীর এজাজ খান এবং এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী। ফাইল ছবি

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদ হারানোর পরও দুটি আসনে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছেন দুই নেতা। খুলনা-১ আসনে (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আমীর এজাজ খান এবং খুলনা-৬ আসনে (পাইকগাছা-কয়রা) এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী। বর্তমানে আমীর এজাজ খান জেলা বিএনপির সদস্য ও মনিরুল হাসান বাপ্পী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। দলীয় শীর্ষ পদ হারানোরও পর দুটি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে খুলনার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সৃষ্টি হয়েছে। প্রার্থীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য যে ত্যাগ তারা করেছেন তারই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে খুলনায় বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর আমীর এজাজ খানকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নানান অভিযোগের কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তে একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী কমিটি বিলুপ্ত করে দেন। সে সময় মহানগর বিএনপির কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। এরপর মহানগর বিএনপির কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে হলেও ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর মো. মনিরুজ্জামান মন্টুকে আহ্বায়ক ও শেখ আবু হোসেন বাবুকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির কমিটি করা হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে ১নং সদস্য করা হয় সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান এবং ২নং সদস্য করা হয় সাবেক সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীকে।

এ ঘটনার পর কিছুটা চাপে পড়ে আমীর এজাজ খান এবং মনিরুল হাসান বাপ্পী। তবে আমীর এজাজ খান তার খুলনা-১ আসনের দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলছিলেন। ওই সময়ে নিয়মিত জেলা বিএনপির অফিসের নিচে এসে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতেন মনিরুল হাসান বাপ্পী। জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পর জেলার সদস্য সচিব শেখ আবু হোসেন বাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নেন। অসুস্থার কারণে দলীয় কর্মসূচিতে তিনি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছিলেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ১ নভেম্বর এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ঘটনার দুদিন পর ৩ নভেম্বর খুলনা-৬ আসনে মনিরুল হাসান বাপ্পীকে বিএনপির মনোনয়ন দিয়ে রীতিমতো চমক দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কারণ আসনটিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আডভোকেট মোমরেজুল ইসলামসহ অনেকেই প্রার্থী ছিলেন। এদিকে ওইদিন খুলনার পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেও খুলনা-১ আসনে মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছিল। আসনটিতে আমীর এজাজ খানের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউর রহমান পাপুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও যুবদল নেতা পার্থ দেব মণ্ডলও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রায় এক মাস পর ৪ ডিসেম্বর আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় আমীর এজাজ খানকে। জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই পদ হারানোর পরও মনোনয়ন পেয়ে খুলনার দুই নেতা বেশ আলোচনায় উঠে এসেছেন।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় আমীর এজাজ খান এর আগেও তিনবার দলীয় পদে নির্বাচন করেছিলেন। আসনটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট বেশি থাকার পরও আওয়ামী লীগের আমলে আমীর এজাজ অনেক ভোট পাওয়াটা তার জন্য মনোনয়নের সুখবর আনার পেছনে অন্যতম কারণ। এছাড়া কয়রা-পাইকগাছা এলাকায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন, বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল এবং শক্তিশালী করার জন্য মনিরুল হাসান বাপ্পীকে সেখানে প্রার্থী করা হয়ে থাকতে পারে।

খুলনা-১ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী আমীর এজাজ খান যুগান্তরকে বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর রাজনীতি করেছি। জেল, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি। ছাত্রনেতা থেকে বিএনপি নেতা হয়েছি। দলের জন্য এই ত্যাগ খুব কম নেতাই করেন। আমাকে মনোনয়ন না দিলে এ আসনটি বিএনপি হারানোর সম্ভাবনা ছিল। তাই হয়তো আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার বিষয়ে তিনি কোনো কারণ জানেন না বলে জানান।

খুলনা-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী যুগান্তরকে জানান, কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির। কয়রা ও পাইকগাছা এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো, দলকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করাসহ আমি নিজেই এ আসন থেকে আগ্রহী থাকায় হয়তো আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। সদস্য সচিব অসুস্থ থাকার কারণে দল মনে করেছে আমি দল পরিচালনা করতে পারব তাই আমাকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব পদ দিয়েছে।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম