Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

আন্দোলনে পিরোজপুর-পটুয়াখালীর বঞ্চিতরা

মনোনয়ন দ্বন্দ্বের আগুনে পুড়ছে বরিশাল বিএনপি

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মনোনয়ন দ্বন্দ্বের আগুনে পুড়ছে বরিশাল বিএনপি

পিছু হটছেন না বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা। বরিশালের অন্তত ৫টি নির্বাচনি এলাকায় চলছে এমন পরিস্থিতি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে মাঝে একটু চুপ থাকলেও আবার মাঠে নেমেছেন বঞ্চিতরা। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফায় ৩৬ জনের মনোনয়ন ঘোষণার পর যেন নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে চলছে সমাবেশ বিক্ষোভ মানববন্ধন আর মশাল মিছিল। বিশেষ করে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেসারাবাদ) ও পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে আন্দোলন থামছেই না। সে সঙ্গে যোগ হয়েছে পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকী-মীর্জাগঞ্জ) এলাকায় দল ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে জেলা বিএনপির নেতাদের বিরোধ। এছাড়া বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া), বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এবং বরিশাল-৫ (সদর) আসনেও মাঠ ছাড়ছেন না মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

পিরোজপুর-২ আসনে ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহম্মেদ সোহেল সুমন মঞ্জুরকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সেখানে চলছে মনোনয়ন পরিবর্তন দাবির আন্দোলন। এখানে সুমন ছাড়াও মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহমুদ হোসাইন ভিপি মাহমুদ, ফখরুল আলম, লাভলু গাজী ও আলবিরুনী সৈকত। মনোনয়ন ঘোষণার পর অন্যরা চুপ থাকলেও মাঠ ছাড়েননি ভিপি মাহমুদ ও ফখরুল। নেসারাবাদে মানববন্ধন করেছে ফখরুল সমর্থকরা। ভিপি মাহমুদের পক্ষে নির্বাচনি এলাকার তিন উপজেলাতেই চলছে সমাবেশ বিক্ষোভ। মশাল মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন আর মানববন্ধনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন তার সমর্থকরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের চেষ্টাতেও মাঠ ছাড়ছেন না তারা। যুগান্তরকে ভিপি মাহমুদ বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর নিজের উপজেলা ভান্ডারিয়াতেই তো তেমন কোনো কর্মসূচি করতে পারেননি সুমন। বাকি দুই উপজেলাতেও একই অবস্থা। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে নেমে যার বাবা একাধিকবার হেরে যাওয়াই কেবল নয়, জামানত পর্যন্ত হারিয়েছেন তার ছেলেকে প্রার্থী করার মাধ্যমে দলের বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সুমন মঞ্জুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।

বরিশাল-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান এবং আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল। বাকি দু’জন থেমে গেলেও মাঠে আছেন ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে নির্বাচনি এলাকার আগৈলঝাড়া উপজেলায় চলছে সোবাহান অনুসারীদের মিছিল সমাবেশ।

মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বরিশাল-৩ আসনেও আন্দোলন চলছে। সর্বশেষ ঘোষণায় এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিনকে। তিনি ছাড়াও মনোনয়নের লড়াইয়ে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার খান। মনোনয়ন ঘোষণার পর সেলিমা অনুসারীদের কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলেও মাঠে আছেন সাত্তার খান। সোমবার মুলাদীতে বিক্ষোভ করেছে সাত্তার সমর্থকরা। মনোনয়ন পরিবর্তন এবং সাত্তার খানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেন তারা। যুগান্তরকে সাত্তার খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ, আমরা যখন তার সুস্থতার জন্য দোয়া মোনাজাত করছি, ঠিক সেই সময়ে মনোনয়নের এই ঘোষণায় হতাশ নির্বাচনি এলাকার মানুষ। এই সিদ্ধান্তে জয়-পরাজয় প্রশ্নে ঝুঁকির মুখে পড়বে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ, তিনি যেন বিষয়টি বিবেচনা করেন।’

বরিশাল-৫ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক এমপি ও মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে। এখানে বিএনপির আরও অন্তত হাফ ডজন নেতা মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে আছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ এবং মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন। নিজেদের মতো করে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। দল ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী সরোয়ার সম্পর্কে কিছু না বললেও আলাদাভাবে চলছে দু’জনের শো’ ডাউন। মনোনয়ন ঘোষণার পর নগরীতে বেশ বড় একটা রিকশা র‌্যালি করেন রহমতউল্লাহ। একইভাবে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন নাসরিন। যুগান্তরকে রহমতউল্লাহ বলেন, ‘মহাসচিব তো বলেই দিয়েছেন যে এটি প্রাথমিক তালিকা। যতদিন পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা না হবে ততদিন আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাছাড়া মাঠের বাস্তবতা বিবেচনা করে দল চূড়ান্ত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী।’ আফরোজা নাসরিন বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নের চিঠি না আসা পর্যন্ত মাঠে আছি। বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন অন্য দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারের অনুসারীরা। রোববার বিকাল থেকে সেখানে চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ আর মশাল মিছিল। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা না থাকা এবং বিপদে আপদে নেতাকর্মীরা কাছে পায়নি দাবি করে শহিদুলকে দেওয়া মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি তাদের। যুগান্তরকে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার বলেন, ‘এখানে জামায়াতের প্রার্থী দলের প্রভাবশালী নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তার বিপরীতে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন একজনকে মনোনয়ন দিয়ে ধানের শীষকে পরাজয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হলো।’ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এই মনোনয়ন সর্বস্তরের নেতাকর্মীর আশার প্রতিফলন নয়। এর বদল না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব।’ পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুদ্ধ হবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

পটুয়াখালী সদর আসনে জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন দল ঘোষিত প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলতাফ হোসেন চৌধুরী। সম্প্রতি একটি সভায় জেলা বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে বিতর্কিত কিছু মন্তব্য করেন তিনি। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে ‘বয়সের কারণে উনি (আলতাফ) উলটাপালটা কথা বলছেন বলে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি নেতারা। প্রার্থী ঘোষণার পর দু’পক্ষের এমন বাকযুদ্ধে অনেকটাই জটিল পরিস্থিতি স্থানীয় বিএনপিতে। বলতে গেলে একে অপরের মুখ না দেখার মতো অবস্থা। এমন পরিস্থিতি ভোটের মাঠে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতো প্রতিবারই নির্বাচনের আগে দেখি আমরা। ক্যাডারভিত্তিক না হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালিত হয় বলেই বিএনপিতে এভাবে বাদ প্রতিবাদের সুযোগ থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ে যাব ধানের শীষের সম্মান বাঁচাতে। একটু অপেক্ষা করুন, দেখবেন এবারও তাই হবে। প্রশ্ন যখন সম্মানের তখন আর কেউ দল কিংবা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবেন না।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম