Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ভ্যাট রিফান্ডে বিড়ম্বনা

মূলধন আটকে পড়ার ঝুঁকিতে ব্যবসা-বাণিজ্য

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূলধন আটকে পড়ার ঝুঁকিতে ব্যবসা-বাণিজ্য

ঘুস-দুর্নীতি ও হয়রানি রোধে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন অনলাইন পদ্ধতিই ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর রিফান্ড চালু হলেও আইভাস সফটওয়্যার (ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট এডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম) আবেদনের চাপ সামলাতে পারছে না। প্রায়ই সফটওয়্যার ‘হ্যাং’ হচ্ছে। এছাড়া পরিপত্রে উল্লেখিত দলিলাদি আপলোড করতে না পারলে আবেদন গ্রহণও করছে না। এ কারণে মূলধন আটকে যাওয়ায় বিনিয়োগের ওপর চাপ বাড়ছে।

গত ১০ নভেম্বর ভ্যাট রিফান্ডের নতুন পরিপত্র জারি করে এনবিআর। এতে বলা হয়, আগাম কর পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়নি, শুধু সেসব আবেদন অনলাইনে করা যাবে। পরে পুরোনো আবেদন পর্যায়ক্রমে সিস্টেমে আপগ্রেড সাপেক্ষে অটোমেটেড পদ্ধতির আওতায় আনা হবে। ৬ মাসের বেশি পুরোনো রিফান্ড আবেদন করা যাবে না। সেসব আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগের সব ম্যানুয়াল চেকও মাঠ পর্যায়ের অফিস থেকে ফেরত নেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৭১১টি আবেদনের বিপরীতে রিফান্ড আটকে আছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার বেশি। একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড চালু করায় হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। চাপের কারণে সিস্টেমে ঠিকমতো আবেদন করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও এনবিআর একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

ভ্যাট পরামর্শকরা বলছেন, সাধারণত আইন-বিধি বা প্রজ্ঞাপন জারির পর তা কার্যকর হয়। এসবের ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া যায় না বা হয় না। অথচ গত ১০ নভেম্বর ভ্যাট রিফান্ড পরিপত্রে সেটিই করা হয়েছে। পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে, ৬ মাস আগের আবেদন নিষ্পত্তি করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে। এজন্য ২৪টি শর্তসংবলিত একটি চেকলিস্ট অনলাইনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কখনোই সংরক্ষণে রাখা সম্ভব নয়। কেবল বড় এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নতুন পরিপত্র অনুযায়ী আবেদন করতে পারবে।

এ বিষয়ে ভ্যাট কনসালটেন্ট অব বাংলাদেশের সভাপতি হাসানুল ইসলাম টিপু যুগান্তরকে বলেন, আইভাস সিস্টেম পুরোপুরি আপগ্রেড না করে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করায় রিফান্ড পেতে বিড়ম্বনা বেড়েছে। প্রথমত, সিস্টেম বেশির ভাগ সময় ডাউন থাকায় আবেদন আপলোড করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, আবেদনের সঙ্গে যেসব দলিলাদি সংযুক্তের শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে। বড় ও কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এসব দলিলাদি সংগ্রহে রাখলেও ছোট ও নন-কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ ছোট প্রতিষ্ঠানের রিফান্ড প্রাপ্তির পথ আরও সংকুচিত হবে। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হতো, যদি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অনলাইনের পাশাপাশি এনবিআর ম্যানুয়ালি আবেদন গ্রহণ করত। তিনি আরও বলেন, মোট ৮ খাতে রিফান্ডের উদ্ভব হয়। এনবিআর শুধু আগাম কর রিফান্ড দিচ্ছে। বাকি খাতগুলোর রিফান্ড না দেওয়ায় ব্যবসার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকুচিত হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিকভাবে দ্রব্যমূল্যের ওপর।

যদিও এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট রিফান্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে আগেও পরিপত্রে উল্লেখিত কাগজপত্র জমার বিধান ছিল। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হয়তো সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই করত না। অনলাইনে রিফান্ড চালু করা হয়েছে কেবল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে। নতুন পদ্ধতিতে করদাতারা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্নের মাধ্যমে তার প্রাপ্য ভ্যাট রিফান্ডের আবেদন দাখিল করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেট আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে ভ্যাট রিফান্ড অনুমোদন করবে এবং সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, হয়রানি বন্ধে ও স্বচ্ছতা আনতে পুরো রিফান্ড প্রক্রিয়া সফটওয়্যারভিত্তিক করা হয়েছে। একসঙ্গে অনেকে আবেদন করায় চাপের কারণে সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছে না বলে মাঠ পর্যায়ের অফিস থেকে জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআর কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬ মাসের পুরোনো আগাম কর ফেরতের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। ডকুমেন্ট আপলোড কাজ শেষ হলে এবং সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানোর পর পর্যায়ক্রমে পুরোনো রিফান্ড আবেদনও সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। এ মাস থেকে হয়তো ব্যবসায়ীরা পুরোনো সব রিফান্ড আবেদন করতে পারবেন। সৈয়দ মুশফিক বলেন, ভ্যাট পরামর্শক বা কোম্পানির কমার্শিয়াল অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণার জন্ম দিয়েছে যে, নতুন পদ্ধতিতে ভ্যাট রিফান্ড পেতে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আদতে তা নয়। এসব কাগজপত্র আগেও জমা দিতে হতো, সেটা ম্যানুয়ালি। এখন ওই কাগজপত্রগুলোই সিস্টেমে জমা দিতে বলা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম