কুমিল্লা-৬ আসন
দলীয় বিভাজনে ঝুঁকিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লা-৬ সদর সংসদীয় আসনের মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। ১৭ বছরের ত্যাগী নেতা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন ছাড়া এ আসন নিয়ে ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। ইয়াছিন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় রাজনীতির বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে আছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
অনেকের মতে, কুমিল্লা সদরের এ আসন হাতছাড়া হলে জেলার ১১টি আসনেই এর প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির বিরোধকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চাইছে দলটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-৬ সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। আর বঞ্চিত হয়েছেন চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের হাইকমান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে দলের একটি অংশ ইয়াছিনকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেছে। এতে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কুমিল্লা-৬ নির্বাচনি আসনে ১৭ বছর ধরে হাজী ইয়াছিন দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। এ আসনে ইয়াছিনকে দলের দুর্দিনের একমাত্র কাণ্ডারি বলে মনে করা হয়। তাছাড়া ইয়াছিন তার নিজস্ব কলকারখানায় এলাকার ২০-২৫ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে দলের জন্য শুধু ব্যয় করেছেন- এমন আলোচনা আছে ক্লিন ইমেজের এ নেতাকে কেন্দ্র করে। ফলে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে, ৫ আগস্টের পর তিনি এবং তার অনুসারীরা সব ধরনের বদনাম এবং নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে ছিলেন।
এদিকে, দলের মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী ছিলেন কুমিল্লা-১০ আসনের নেতা। তিনি সেখানে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ওই আসনে বিএনপির জন্য মনিরুল হক চৌধুরীর ত্যাগ এবং অবদান রেখেছেন। তার ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ওই আসনটি। সম্প্রতি আসন পুনর্বিন্যাসে মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা-১০ আসন থেকে কুমিল্লা-৬ আসনের ভোটার হয়েছেন। অর্থাৎ কুমিল্লা-১০ আসন থেকে ছোট্ট সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ আসনের সঙ্গে তাকে যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, হাজী ইয়াছিন যে এলাকার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই সদর উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন মিলিয়ে সেখানে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৯ হাজার। আর মনিরুল হক চৌধুরীর সদর দক্ষিণ উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার। ইয়াছিনের জন্মস্থান হওয়ায় সদর দক্ষিণেও তার একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনিরুল হক চৌধুরীকে কুমিল্লা-১০, আর হাজী ইয়াছিনকে কুমিল্লা-৬ আসনের মনোনয়ন দিলে দলের জন্য ভালো ফল আসবে। এতে দলীয়ভাবে শৃঙ্খলাও ফিরে আসবে কুমিল্লা জেলায়।
কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন শুধু সদর আসন নয়, গোটা দক্ষিণ জেলার সব আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন। বিপদ-আপদ, মামলা-হামলা ও নির্যাতনে ইয়াছিন ভাইকেই আমরা পাশে পেয়েছি। তাকে ছাড়া কুমিল্লা-৬ আসন বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যাবে। দলের হাই কমান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল কাইয়ুম বলেন, মনিরুল হক চৌধুরীকে কুমিল্লা-১০ আসন এবং হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনকে কুমিল্লা-৬ আসনে মনোনয়ন দিলে দুটি আসনই রক্ষা হবে। অন্যথায় ভুল সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে দুটি আসনই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তিনি বলেন, আমরা চাই দুই নেতাকেই দল যথাযথ জায়গায় দুই আসনে মূল্যায়ন করুক। এখানে একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দলের হাই কমান্ডকে ভুল তথ্য দিচ্ছে; যাতে দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, সদর আসন গোটা জেলার নেতৃত্ব দেয়। ভবিষ্যৎ আন্দোলন সংগ্রামে দলকে প্রস্তুত করতে হলে এখানে হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের বিকল্প নেই। তিনি কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন। অনেক ত্যাগ, শ্রম এবং অর্থ ব্যয় করেছেন। মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা-১০ আসনের জন্য পারফেক্ট।
মনিরুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক চৌধুরী বলেন, বিএনপি অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের হাইকমান্ড খোঁজ-খবর নিয়ে ক্যাপাসিটি এবং জনপ্রিয়তা যাচাই করেই কুমিল্লা-৬ আসন থেকে মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন। মনোনয়ন বঞ্চিতরা অনেক কিছুই বলতে পারে। তবে তাদের উচিত হবে দলের স্বার্থে একতাবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা।
