পোস্টাল ভোট
সিলেটের ১০ লাখ প্রবাসীর মধ্যে নিবন্ধন মাত্র ৩২ হাজার!
সংগ্রাম সিংহ, সিলেট
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে ভোটাধিকারের জন্য প্রবাসীদের ২২ বছর লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগে তাদের নিবন্ধন নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পোস্টাল ভোটের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করলেও দূতাবাসগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকা, প্রবাসীদের কর্মব্যস্ততাসহ নানা কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সেভাবে এগুচ্ছে না। এছাড়া অনেকেই এই পদ্ধতির ব্যাপারে তেমন একটা ওয়াকিবহালও নয়। তাদের উদ্ধুদ্ধ করতে প্রার্থী ও দলগুলোরও তেমন উদ্যোগ নেই।
সমীক্ষা অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলার অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ৩৫ লাখ, মৌলভীবাজারের ২৭ লাখ, হবিগঞ্জের ২৫ লাখ এবং সুনামগঞ্জের ২৩ লাখ। সিলেটের প্রবাসীদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যে ৩০ শতাংশ, ইউরোপ-উত্তর আমেরিকায় ১০ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য দেশে ৫ শতাংশের অবস্থান। বিশালসংখ্যক প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ৩২ হাজারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিভাবে শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী চলতি বছর সিলেটের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রায় ২৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু ভোটদান কিংবা দেশের শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই মানুষগুলো বরাবরই অবহেলিত থেকেছে।
লন্ডনের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক আবু সালেহ মাসুম যুগান্তরকে বলেন, দেশের কল্যাণে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। শুধু অর্থনীতি নয়, দেশের যে কোনো সংকটে প্রবাসীরা গোটা বিশ্বে জনমত গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই প্রবাসীরা যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ করা উচিত। কানাডা প্রবাসী লেখক বশির আহমদ জুয়েল বলেন, প্রার্থী ও দলগুলোর উচিত প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রবাসীরা যাতে দ্রুত নিজেদের নিবন্ধন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা। এজন্য প্রার্থী ও দলগুলো ক্যাম্পেইন সেল খুলতে পারে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবাসী শাখা ও ইউনিটগুলো কাজ করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অনলাইন একটিভিস্ট শাহাব উদ্দিন শিহাব বলেন, ‘এবারের নিবন্ধন শুধু ভোট নয়, এই নিবন্ধন গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তাই শতভাগ নিবন্ধন নিশ্চিতে সর্বদলীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রবাসীদের নিবন্ধন নিশ্চিতে আমাদের দলের প্রবাসী ইউনিটগুলো কাজ করছে। যেহেতু তফসিল ঘোষণা হয়েছে এই প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে বলে আশা করছি।’
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি সর্বপ্রথম জামায়াতই করেছিল। তাই বিষয়টি জামায়াত অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিভিন্ন দেশে আমাদের দলের ইউনিট আছে। নিবন্ধনের ব্যাপারে ইউনিটগুলো কাজ করছে।’
এদিকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে সিলেট বিভাগের প্রবাসী সংগঠনগুলো সচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাম্পেইন, অনলাইন গাইডলাইন এবং দূতাবাসভিত্তিক সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। তবে অনেক দূতাবাসে পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা না থাকায় ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ২০০৯ সালে নির্বাচনি আইনে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। ২০১৯ সাল থেকে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধনের ব্যবস্থা শুরু হলেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাথমিক অংশগ্রহণ ছিল খুবই সীমিত।
