চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ
ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বাড়ল
সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১২০ টাকার নিচে ভালোমানের পেঁয়াজ মিলছে না। আর খুচরা বাজারে ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে কয়েক দিন আগে দাম কিছুটা কমলে বুধবার থেকে আবার দাম বাড়ছে। ভরা মৌসুমে দাম কমার পরিবর্তে উলটো বেড়েছে। গত সপ্তাহেও একদফা বাড়ানো হয়েছিল পেঁয়াজের দাম।
চট্টগ্রামে দিন দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়ছে। কোনো পণ্যের দামই কমার লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও সে দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বিভিন্ন সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিমের সমন্বয়ে বুধবার অভিযান চালানো হয়। আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করায় সততা বাণিজ্যালয়কে ৫০ হাজার টাকা এবং গ্রামীণ বাণিজ্যালয়কে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াাজ বিক্রির জন্য অন্যদের সচেতন করা হয়। এরপরও ব্যবসায়ীদের দমানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, এক মাস ধরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক সিন্ডিকেট সংকট দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীরাও বাজার অস্থির করে রাখে। সূত্র জানায়, দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের দাম পায়। এ কারণে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) দেওয়া বন্ধ রেখেছিল সরকার। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও মজুতদারির কারণে দাম বাড়ছে। মূল কারণ হলো-একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর মজুতদারি। কয়েকটি সিন্ডিকেট কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুত করে রাখে। এরপর ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারে ছাড়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, তিন সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার মতো দাম বেড়ে যায়। প্রতি কেজির দর ওঠে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। আমদানির অনুমতি দেওয়ার খবরে একদিনের ব্যবধানে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমে আসে। তবে সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেলে দাম আবার ১৫০ টাকায় ওঠে। তবে বাজার সহনীয় রাখতে রোববার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হচ্ছে। প্রতিটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। ১ আগস্ট থেকে যারা আবেদন করেন-তারাই কেবল নতুন করে আবেদন দাখিল করতে পারবে। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বড় মোকাম হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, আমদানির খবরে পেঁয়াজের দাম দুদিন কিছুটা কমেছিল। এখন আবার বেড়েছে। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুরোদমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চলে আসবে। তখন দাম কমবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে খোলা আটা প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা। প্যাকেট আটার দাম আগের মতো। দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দীর্ঘদিন ধরে তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। রসুনের দাম কিছুটা কম। আমদানি রসুন প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দেশি রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরু মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৭০, নেপালি মসুর ১৪০, ছোট মুগডাল ১৩০ থেকে ১৪০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১১০, মাষকলাই ডাল ১৮০, ডাবলি ৬০, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। মানভেদে শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল, দেশি পটোল, দেশি গাজর, দেশি শসা, ছোট করলা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, কচুর লতি, কচুরমুখী, লাউ, চালকুমড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ছিল। ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের প্রতি পিস দেশি হাঁস ৫০০ টাকা, দুই কেজি ওজনের চীনা হাঁস প্রতি পিস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
