রাজশাহীর তিনটি আসন
মাঠে বঞ্চিতরা কিনলেন মনোনয়ন ফরমও
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীর তিনটি আসনে নির্বাচনের মাঠ ছাড়ছেন না বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা। দলীয় নির্দেশনার পরও তারা গণসংযোগসহ প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তারা প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরমও তুলেছেন। রাজশাহীর মোট ছয়টি আসনের মধ্যে একমাত্র রাজশাহী-২ (মহানগর) আসন ছাড়া বাকি পাঁচটিতেই বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের বিদ্রোহীদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। মনোনয়ন বঞ্চিতদের কেউ কেউ বলছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের চাপেই তারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন। এছাড়া তিনি সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই। শরিফ উদ্দিন এখনো মনোনয়নপত্র তোলেননি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা সুলতানুল ইসলাম তারেক। ১৮ ডিসেম্বর তারেকের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মনোনয়নপত্র উত্তোলনের পর তারেকের পক্ষে মাঠে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন উপজেলা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একাংশ। তারা বলছেন রাজশাহী-১ আসনে প্রার্থী বদল হবে। শেষে মনোনয়ন পাবেন তারেক। তারেকের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলামসহ দুই উপজেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। আনারুল ইসলাম বলেন, তারেকের সঙ্গে রয়েছেন দুই উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সিংহভাগ নেতাকর্মী। রাজশাহী-১ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন না করলে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটবে। আমরা ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থী বদলের দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাব। শেষ পর্যন্ত তারেক ভোটের মাঠে থাকবেন বলে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-পুঠিয়া) আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। তবে ৩ নভেম্বর এ আসনে মনোনয়ন পান রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। এই আসনে আরও সাতজন বিএনপি নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর অনেকেই মাঠ থেকে সরে গেলেও আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল গণসংযোগ এবং প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। ১৮ ডিসেম্বর উজ্জ্বলের পক্ষে মনোনয়নপত্র তুলেছেন চারঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ পাশাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ। মুরাদ পাশা জানান, দুই উপজেলার নেতাকর্মীদের বড় অংশই চান মনোনয়ন বদল করে উজ্জ্বলকে প্রার্থী করবে বিএনপি। নেতাকর্মীরা আরও মনে করেন ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনের আগে অনেক কিছু ঘটে যাবে। আমরা মনোনয়নপত্র উত্তোলন করে রাখলাম। দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে রেকর্ডসংখ্যক ১২ জন নেতা বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ঘোষণার অনেক আগে থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে গণসংযোগে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডলকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ৩ নভেম্বর মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে বঞ্চিত প্রার্থীদের অনুসারীরা। এরই মধ্যে ২০ নভেম্বর এই আসনে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন বঞ্চিত জুলকার নাঈম মোস্তফা বিস্ময়। বিস্ময় রাজশাহী-৫ আসনের দুবারের সাবেক সংসদ-সদস্য প্রয়াত নাদিম মোস্তফার ছেলে। নাঈম মোস্তফা বিস্ময়ের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আকবর আলী বাবলুসহ বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে এই আসনের অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাও মনোনয়নপত্র উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি মনোনয়নপত্র উত্তোলন করবেন।
বিএনপি প্রার্থীর বিপরীতে মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়ন উত্তোলন প্রসঙ্গে দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমন আহমেদ সুমন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীতে তরুণদের দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে এগিয়ে রাখার কথা বলেছেন। সেই হিসাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম মণ্ডল একজন বয়োঃবৃদ্ধ প্রার্থী। আমরা তরুণদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করে আসছি। এই হিসাবে প্রয়াত সংসদ-সদস্য নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলকার নাঈম মোস্তফা বিস্ময় বয়সে তরুণ। তিনি ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ও জনপ্রিয়। নাদিম মোস্তফার ছেলে হিসাবে রাজশাহী-৫ আসনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ বিস্ময়কে এমপি হিসাবে দেখতে চান।
রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন-এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ জানান, দল ত্যাগী ও যোগ্যদেরই মনোনয়ন দিয়েছে। অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে মনোনয়ন তুলছেন তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করি দলের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে তারা নিজেরাই সরে যাবেন এবং দলীয় প্রার্থীর হয়ে মাঠে নামবেন। দলের নির্দেশনাও এমনই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসার পর আমরা সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করে ফেলব বলে আশা করছি।
