আমদানি সুতায় টিকে আছে ‘রাজশাহী সিল্ক’
তানজিমুল হক, রাজশাহী
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী রেশম কারখানায় স্বল্প পরিসরে চালু রয়েছে উৎপাদনের কাজ। সেখানে রেশম কাপড়ে ছাপ দেওয়ার কাজ করছেন শ্রমিক। সম্প্রতি তোলা ছবি -যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বের সৌখিন পরিধেয় হিসাবে খ্যাত রেশম বা সিল্ক। রেশমের মতো সমাদৃত ও আরামদায়ক পরিধেয় দ্বিতীয়টি আর নেই। আর রেশম ও রাজশাহী-এ দুটো শব্দ একে অপরের পরিপূরক। পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আর এ সম্পর্কের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। তবে নানা কারণে ঐতিহ্যের এই রেশম হালে সংকটে রয়েছে। কমেছে গুটির উৎপাদন। যেখানে বছরে সাড়ে ৪শ টন সুতার প্রয়োজন, সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ৪০ টন। এ কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করা সুতার ওপর টিকে আছে রেশম শিল্প। ফলে গত দুই দশক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে রেশম বস্ত্রের উৎপাদন। তবে বেসরকারি উদ্যোগে রাজশাহীতে স্থাপন করা হয়েছে আমদানি করা সুতানির্ভর রেশম কারখানা। তাদের ব্যবসাও জমজমাট। অবশ্য বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, রেশম উৎপাদনের সম্প্রসারণের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) ড. এমএ মান্নান জানান, রাজশাহী রেশম পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ঋণের বোঝা আর জনবল সংকট। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ইতোমধ্যে জনবল সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অচিরেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে রাজশাহী তথা দেশের ঐতিহ্যবাহী রেশম।
সব মৌসুমেই জমজমাট থাকে বেসরকারি শোরুম : রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকা রেশম পল্লী হিসাবে পরিচিত। এ এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি রেশমের শোরুম। বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা এসব শোরুমে সব সময় জমজমাট থাকে। রাজশাহীর সর্ববৃহৎ রেশম কাপড়ের শোরুম সপুরা সিল্ক মিল লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, রেশম বস্ত্রের চাহিদা সারা বছরই থাকে। তবে ঈদের সময় সরগরম বেশি থাকে।
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক হান্টারের মতে, রাজশাহী জেলায় রেশম সুতায় তৈরি রেশম বস্ত্র বুনন বহু শতাব্দী পূর্ব থেকে হয়ে আসছে। অষ্টাদশ শতাব্দি পর্যন্ত রেশম সুতা তৈরির ক্ষেত্রে রাজশাহী ছিল একমাত্র বাণিজ্য কেন্দ্র। সময়ের আবর্তে দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও তহবিলের অভাবে রেশমের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে।
ঐতিহ্য ফেরাতে জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ : রেশম শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথম দৃষ্টি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাই ১৯৭৭ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে রেশম বোর্ড গঠন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে রেশম বোর্ডের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। শুরু হয় হারানো রেশমের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কর্মযজ্ঞ। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলতো বটেই, উত্তরের ঠাকুরগাঁও থেকে দক্ষিণে সাতক্ষীরা এবং পূর্বে বান্দরবান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে রেশম চাষ। রাজশাহী, ভোলাহাট, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লায় আটটি মিনিফিলিয়েচার গড়া হয়। নেওয়া হয় ক্ষুদ্র তুত বাগানসহ বিভিন্ন প্রকল্প। পরবর্তীতে রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁওয়ের কারখানা দুটি ভালোই চলছিল। তবে বিধিবাম, ১৯৯১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপসনে মন্ত্রণালয় ঢালাওভাবে সুতা আমদানির সুযোগ করে দেয়। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সুতা আমদানি করতে থাকে। ভারতে পাচার হয় সুতা। পথ হারিয়ে ফেলেন স্থানীয়ভাবে সুতা উৎপাদনকারীরা। ঋণের কারণে সর্বশেষ ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী রেশম কারখানা। রাজশাহী রেশম উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুমন ঠাকুর জানান, দীর্ঘ প্রায় দেড়যুগ বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই রাজশাহী রেশম কারখানা স্বল্প পরিসরে পুনরায় চালু করা হয়েছে। বর্তমানে কারখানার ১৯টি পাওয়ার লুমে পর্যায়ক্রমে রেশম বস্ত্র বুনন করা হচ্ছে।
