গড় আর্থিক অগ্রগতি ৬৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ
মুক্তিযুদ্ধের তিন প্রকল্পে ধীরগতি, অপচয়ের শঙ্কা
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ধীরগতি বিরাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তিন প্রকল্পে। এসব বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু শুরু থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৩১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এতে গড় আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতিও কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রকল্পগুলো হলো-‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’, ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ এবং ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, সবশেষ নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে শেষ নাও হতে পারে। তবে প্রকল্প পরিচালকরা বলছেন, প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এসব প্রকল্প অনেক দিন ধরেই চলছে। এখনো যদি বাস্তবায়নে গতি না থাকে তাহলে অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা আছে। তবে হঠাৎ করেই বন্ধ করাও যাবে না। তাহলে আগে যেসব পূর্তকাজ হয়েছে সেগুলো কোনো কাজে আসবে না। এজন্য প্রকল্পগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি মনে হয় কোনো অঙ্গ অপ্রয়োজনীয় বা বাস্তবায়ন না করলেও চলবে তাহলে সেগুলো বাদ দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে অসমাপ্ত কার্যক্রম সমাপ্ত করে প্রকল্প শেষ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং পরিকল্পনা কমিশন-তিন পক্ষ বসে একটা সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। দিনের পর দিন প্রকল্প চলতে দেওয়া যায় না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০ হাজারটি বীর নিবাস তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩০৪টি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ৭ হাজার ২৯২টির নির্মাণকাজ চলছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য রয়েছে।
এছাড়া ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটির মূল মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর। কিন্তু নানা জটিলতায় তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এতেও শেষ হয়নি। এবার চতুর্থবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি না করে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩৯৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। শুরু থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। পাশাপাশি বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। দুই বছরে এটি বাস্তবায়নের কথা থাকলে এখন লাগবে সাড়ে ৮ বছর। প্রকল্পটিতে ধীরগতির কারণ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় জানায়, ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) শাহবাগ থানা নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় সেটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। নির্মাণাধীন অন্যান্য কাজের কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নতুন কাজ যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রণব কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে। এখন দেখা যাক কী হয়। তবে শাহবাগ থানা নিয়ে যে জটিলতা আছে সেটি কেটে গেছে। থানার জায়গাটি আমরা পেয়েছি। সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। তাই বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলেই মনে করছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ৫২টি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দুটিতে কাজ চলছে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমির বর্ধিত অংশের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সাল থেকে চলমান। সবশেষ বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী এটি আগামী ডিসেম্বরেই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটির ধীরগতির কারণ সম্পর্কে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, অফিস চলাকালে অফিসে আসেন তারপর কথা হবে।
