Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সংকট মোকাবেলায় খাদ্য নিরাপত্তায় জোর

আবাদযোগ্য কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না

পতিত জমিতে আবাদ করতে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’- ভূমিমন্ত্রী

Icon

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সর্বোচ্চ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে দেশে প্রায় ১১ কোটি একর পতিত বা অনাবাদি জমি রয়েছে, যা মোট জমির প্রায় ৫ শতাংশ। ধরন অনুযায়ী এই জমিতে ফসল বা সবজি চাষ করতে হবে। আবাদযোগ্য কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না। পতিত কৃষিজমিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি দেখভাল করতে সিনিয়র ১৪ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কঠোর মনিটর করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিষয়টি জনগণকে জানাতে ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করেছে একাধিক জেলার প্রশাসন। এতে বলা হয় ‘জমি অনাবাদি/পতিত রাখলে ওই জমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর ৯২ ধারা অনুযায়ী খাস খতিয়ানভুক্ত করার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’- শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোট ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার একর। পরিবারপ্রতি জমির পরিমাণ প্রায় ৮২ শতক। এসব জমির মধ্যে বসতবাড়ি, পুকুর, স্থায়ী ফসলী জমি, অস্থায়ী ফসলী জমির পাশাপাশি পতিত জমিও রয়েছে। এর মধ্যে দুই ধরনের অর্থাৎ অস্থায়ী পতিত এবং স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার একর। অস্থায়ী পতিত জমি বলতে বোঝায় যেসব জমিতে চলতি বছরে আবাদ বা কোনো ধরনের শস্য উৎপাদন হয়নি কিন্তু তার আগের বছরে জমিটিতে আবাদ হয়েছে। এমন জমির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৫ হাজার একর। পরিবারপ্রতি এ ধরনের জমি রয়েছে গড়ে প্রায় এক শতক। অন্যদিকে কখনই কোনো ধরনের আবাদ ও শস্য উৎপাদন হয়নি এমন জমিকে বলা হয় স্থায়ী পতিত জমি, দেশে যার পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি ৩১ লাখ ৫৯ হাজার একর। পরিবারপ্রতি এ ধরনের পতিত জমি রয়েছে গড়ে প্রায় তিন শতক। বছরের পর বছর এসব জমি পতিত পড়ে থাকছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ এপ্রিল দেশবাসীর উদ্দেশে ৩১ দফা নির্দেশনা দেন। এর ১৫ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছিল- ‘খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে।’ এর ধারাবাহিকতায় সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না। যেসব জায়গায় ধান বা আলু উৎপাদন ভালো হয় না তা চিহ্নিত করে ভুট্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেখানে যে ফসল বা সবজি হয় সেখানে তাই করতে হবে। মোট কথা কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না।’

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে চাষযোগ্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি/পতিত রাখা যাবে না বলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বরিশাল, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো জমি পতিত না রেখে কৃষিকাজে সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা মোতাবেক জমির মালিকদের কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায় এমন জমি পতিত না রেখে উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হল।

কৃষিকাজের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কোনো ব্যক্তি তার জমি কৃষিকাজে ব্যবহার না করে পতিত রাখলে উক্ত জমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর ৯২ (১) ধারা মোতাবেক খাসকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ডিসিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। বিষয়টি আমরাও ক্লোজ মনিটর করছি। দেশে যে মোট অনাবাদি/পতিত জমি রয়েছে তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। কেন অনাবাদি রাখা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। আমরা চাই দেশের এক ইঞ্চি আবাদযোগ্য জমিও পতিত থাকবে না। এ ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে যাবে। পতিত জমির মালিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা কথা বলবেন। মোট কথা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পতিত জমি খাস নয়, আবাদি বানানোই উদ্দেশ্য। ফলে কেউ অন্যায়ের শিকার হবেন না।’

কৃষির সর্বোচ্চ উৎপাদন বৃদ্ধি ও পতিত জমির বিষয়টি দেখভাল করতে সম্প্রতি দেশকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করে মন্ত্রণালয়ের ১৪ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই এক ইঞ্চি আবাদি জমিও যেন পতিত না থাকে। জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য।’

এ প্রসঙ্গে বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। অনেকে গ্রামে জমি কিনে বছরের পর বছর শহরে বসবাস করছে। অথচ ওই জমিগুলো বছরের পর বছর অনাবাদি পড়ে থাকছে। এর কোনো সুফল পাচ্ছে না দেশবাসী। কোনো কৃষিজমি পরপর ৩ বছর অনাবাদি থাকলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। তাই সবাইকে সচেতন এবং দেশে সর্বোচ্চ ফসল ও সবজি ফলাতে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম