Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মঙ্গল শোভাযাত্রা কাল : প্রস্তুত চারুকলা

এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চারিদিকে চলছে বর্ষবরণের আয়োজন। উৎসব আনন্দের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে নতুন বাংলা বছর ১৪২৫-কে। বাঙালির বর্ষবরণের আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার ‘ইউনেস্কোর স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’র স্বীকৃতি অর্জন এ আয়োজনের মহত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই মঙ্গল শোভাযাত্রার বেশিরভাগ প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারুকলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা। লালন সাঁইজির গানের অমিয় বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে হচ্ছে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। যাতে আবহমান বাংলার লোকজ মোটিভের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টার পরপরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন লোকজ শিল্প কাঠামো নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এবারের শোভাযাত্রায় মোট বড় শিল্প কাঠামো থাকছে সাতটি। এগুলো হল বক ও মাছ, মা ও পাখি, সূর্য, হাতি, জেলে, মহিষ, সাইকেলে চড়া ট্যাপা পুতুল। পাশাপাশি ফুল, রাজা-রানীসহ আরও নানা ধরনের মোটিভতো থাকছেই। স্বর্ণালি বর্ণের হরিণ থাকার কথা থাকলেও সেটি শেষ পর্যন্ত থাকছে না বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে কিনা তা নিয়ে এক ধরনের সংশয় ছিল আয়োজকদেরই। কারণ সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে কার্যত ৫ দিনেরও বেশি সময় কোনো কাজ করতে পারেনি মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছে চারুকলা অনুষদের ২০তম (সম্মান) ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও চারুশিল্পীরাও রয়েছেন। ২০তম ব্যাচের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে চারুকলার সবাই অংশ নেন। কিন্তু আন্দোলনের কারণে অনেক ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরই তাদের বাবা-মা আসতে দেননি। কার্যত কাজ বন্ধ ছিলই বলা যায়। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময়েই কে বা কারা চারটি শিল্প কাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি করে বলেও জানা যায়। এতকিছুর পরেও বাঙালির প্রাণের এ মঙ্গল শোভাযাত্রা যে কোনো ভাবেই করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিন্টিং বিভাগের এমএফএ’ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান মিশু যুগান্তরকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল গঠনও হয় শিল্পকর্ম বিক্রি করে। আন্দোলনের সময় সেটিও পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অনেক বিদেশি বন্ধুরাও এ সময়ে শিল্পকর্ম কিনেছেন। তারাও আসতে পারেননি। তবুও এখনও শিল্পকর্ম বিক্রি হচ্ছে এবং যে তহবিলই গঠিত হবে তাতে মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই বড় কাঠামোগুলোর মধ্যে কয়েকটির রং লাগানোসহ পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়েছে। আজকের মধ্যে বাকি কাঠামোগুলোর কাজ শেষ করা হবে।

এ বছরের আয়োজন নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীতে বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের সব অর্জন বৃথা হয়ে যেতে পারে যদি মানুষের মধ্যে মানবিক চেতনার উন্মেষ না ঘটে। এ বছর আমরা তাই লালন সাঁইয়ের থেকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি। সেই প্রতিপ্রাদ্যকে ধারণ করে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে বিশ্ব মানব হয়ে উঠার পাশাপাশি মানবিকতার বোধ চর্চার মধ্য দিয়ে যেন নিজেদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি সেই আহ্বান জানানো হবে।

ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে ১৫ মার্চ বৈশাখ বরণে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম