ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি
চা দোকানের টং টেবিল আঙিনায় তুলির আঁচড়
মাহাদী হাসান
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তুলির আঁচড়ে রঙিন হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) চায়ের দোকানগুলো। চা দোকানের টং, টেবিল কিংবা চারপাশের আঙিনাতে শিল্পীর তুলিতে আঁকা হয়েছে নানা চিত্র। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে দেশের হারিয়ে যাওয়া রিকশাচিত্র সবার সামনে তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
টিএসটি নাম শুনলেই কানে ভেসে আসে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ। বন্ধুরা মিলে ক্লাসের ফাঁকে গান, গল্প আর কবিতায় জম্পেশ আড্ডা। শুধু আড্ডা-গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ টিএসসি। দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রও এ টিএসসি। এবার এই টিএসসির আকর্ষণ বাড়াতে চা দোকানের টং, টেবিল কিংবা চারপাশের আঙিনাতে রিকশা চিত্রের আদলে ফুল, পাখি, গাজির পটসহ নানা চিত্র আঁকা হয়েছে। যা দেখে মুগ্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা।
‘দ্বিতীয় অধ্যায় : চায়ের কাপে রিকশাচিত্র’ শিরোনামে এ উদ্যোগ নিয়েছেন ২০১৯ সালের মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিরিনা আক্তার শিলা এবং তার বন্ধুরা। তাদের উদ্যোগে টিএসসিকে বর্ণিল রূপ দিয়েছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিরিন আক্তার শিলা বলেন, মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে আমি লাল জামদানি শাড়ি এবং রিকশাহুড ব্যবহার করেছিলাম। সেখান থেকেই রিকশার প্রতি মায়া-মমতা, রিকশা আর্ট, পেইন্টিং এসবের প্রতি ভালো লাগা কাজ করে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হলেও আর্ট-কালচারের প্রতি আমার বিশাল একটা দুর্বলতা কাজ করে। তিনি বলেন, স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং এ জাতীয় প্রযুক্তির কারণে হ্যান্ড পেইন্ট হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে রিকশাকেও লাল-হলুদ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। মূল যে সত্তাটি ছিল, তা আর থাকছে না। সেসবকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
চায়ের টং দোকানকেই কেন বেছে নেওয়া-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে চায়ের দোকান নেই। আমরা যদি পশ্চিম-ইউরোপীয় দেশগুলো কিংবা ভারতের রাজস্থানের কথা চিন্তা করি, তারা তাদের রাস্তা-বাড়িঘর নিজেদের সংস্কৃতি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। চায়ের টং সবখানেই পাওয়া যায়। এসব ভেবেই আসলে এই চিন্তা মাথায় আসে।
মিস ইউনিভার্স শিলা বলেন, প্রাথমিকভাবে টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরুর পরিকল্পনা ছিল। টিএসসিকে অনেকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বলে থাকেন। সাংস্কৃতিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামসহ অতীতের নানা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ এখান থেকেই শুরু। তাই, আমরা যদি টিএসসির রং পরিবর্তন করতে পারি, তবে আমরা আমাদের সমাজের রং পরিবর্তন করতে পারব। নিজের চায়ের দোকানকে নতুন রূপে দেখে কেমন লাগছে জানতে চাইলে চা বিক্রেতা রুবেল যুগান্তরকে বলেন, আমরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করি। ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে দোকান সাজাতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার আক্ষেপ পূরণ করে দিয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই। দোকানে ছবি আঁকার পর কাস্টমারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। চা খাওয়ার পাশাপাশি আমার সঙ্গে দোকানের ছবিও তুলছেন। কথা হয় টিএসসিতে চা খেতে আসা ঢাবির দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী লাবিবা আক্তারের সঙ্গে। নতুন রূপে চায়ের দোকানগুলো কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
