Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মাদারীপুর আদালত প্রাঙ্গণে ব্যতিক্রমী বিয়ে

বিচ্ছেদের পর সন্তানের কারণে আবার মিলন

Icon

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের উদ্যোগে আদালত প্রাঙ্গণে সোমবার রাতে এক ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে মাদারীপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ, জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সিদ্দিকুর রহমান সিংসহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ৩ বছর আগে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের খাগদী এলাকার কুদ্দুস সরদারের ছেলে মো. মিলন সরদারের সঙ্গে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর এলাকার শওকত আলীর মেয়ে সুমি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিলন ও সুমির সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এর কয়েক মাস পরই পরিবারে কলহ দেখা দেয়। একপর্যায় সুমি আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুর আদালতে স্বামী মিলনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ কারণে মিলন রাগ করে সুমিকে তালাক দেন। সুমির করা মামলাটি সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার। ওই দিন আসামি মিলন ও মামলার বাদী সুমি এবং তাদের একমাত্র সন্তানসহ উভয় পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে ছোট একটি শিশু এজলাসের ভেতরে দৌড়াদৌড়ি করছিল। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছেলেটির পরিচয় জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয় জানান যে, চলমান এই মামলার আসামি ও বাদীর ছেলে। এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওই মামলার বাদী সুমি আক্তার এবং আসামি মিলন সরদারকে সন্তানের কথা বিবেচনা করে আবার সংসার করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী বাদী-বিবাদী আলাপ-আলোচনা করে ভুল সংশোধন করে পুনরায় সংসার করবেন মর্মে আদালতকে অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন। উভয় পরিবারের সম্মতিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় নতুন কাবিন মূলে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে মিলন ও সুমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ বলেন, আদালত চলাকালে আমি জবানবন্দি নিচ্ছিলাম তখন দেখলাম একটি শিশু এজলাসের ভেতরে দৌড়াদৌড়ি করছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা শিশুটিকে বের করে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, শিশুটি ওর মতো করে থাকুক এবং জানতে চাইলাম শিশুটি কার? তখন জানতে পারলাম চলমান মামলার বাদী ও আসামির ছেলে। তখন বিষয়টি আমার কাছে অন্যরকম মনে হয় এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে বাদীকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি বর্তমান অবস্থায় সংসার করতে রাজি আছেন? বাদী বলল জি স্যার, রাজি আছি। সঙ্গে সঙ্গে আসামিকেও জিজ্ঞাস করলাম আপনি কি সংসার করতে রাজি আছেন? আসামি বলল জি স্যার রাজি। ওইদিন আদালতের কাজ শেষ করে মামলার দুই আইনজীবী, বাদী ও বিবাদী পক্ষের লোকজনসহ আমার চেম্বারে বসে পুরো ঘটনা শুনলাম। তখন আমার মনে হলো দুজনের সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে সংসার হচ্ছে না। উভয় পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তখন উভয় পরিবারের লোকজনসহ মিলন ও সুমি পুনরায় সংসার করতে রাজি হলেন। তবে বিষয়টি গ্রামের মানুষ ভালোভাবে নেবে না বলে উভয় পরিবারের সদস্যরা জানালেন। তখন আমি বললাম, আপনাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটি আমরা আদালত প্রাঙ্গণে বসে করব। জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সব বিচারক, আপনাদের পরিবারের লোকজন ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করব। সেই মোতাবেক সবার উপস্থিতিতেই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করলাম। ভেঙে যাওয়া একটি সংসার পুনরায় একত্রিত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম