Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কুমিল্লায় পারিবারিক উদ্যোগ

প্রাচীন মুদ্রা-আসবাবপত্রে আলমগীরের জাদুঘর

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পারিবারিক উদ্যোগে কুমিল্লায় প্রায় ২শ বছরের প্রাচীন ১শ ধরনের মুদ্রা এবং আসবাবপত্রের সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে মিনি জাদুঘর। এটি তৈরি করেছেন শাহ আলমগীর খান নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী।

নগরীর ছাতিপট্টি এলাকায় আজম খান জুয়েলার্সের অভ্যন্তরে ওই মিনি জাদুঘরের অবস্থান। জাদুঘরটিতে শুধু মুদ্রাই নয়, আছে প্রাচীন আমলে মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধাতুর তৈরি চেয়ার, নৌকা, সেঁতার, আতরদানি, কাঁটা চামচ, চামচ, কুপি, সুরমাদানি, সিঁদুরদানি, ফুলদানি, নারীদের গলার হার, পায়ের মল, কানের মাকড়ি, চাবিদানি, আংটি ইত্যাদি। এসব আসবাবের বেশিরভাগ রুপার তৈরি হলেও এখানে রয়েছে ব্রোঞ্জ, তামাসহ বিভিন্ন ধাতুর তৈরি আসবাব এবং মুদ্রা। জানা গেছে, নগরীর ছাতিপট্টি এলাকায় আজম খান জুয়েলার্স নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রায় শত বছর বংশপরম্পরায় পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্ণধার শাহ আলমগীর খান। তিনি জানান, তার বাবা মরহুম আলী আজম খান শখের বসে প্রাচীন এসব মুদ্রা এবং আসবাব সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন আলমগীর খান। বাবার রেখে যাওয়া এসব প্রাচীন মুদ্রা এবং আসবাবে মন কাড়ে তারও। পরে ওই স্বর্ণ দোকানেই আলাদা সংরক্ষণাগার তৈরি করে সেগুলো সেখানে রাখেন। ৭৫ বছর ধরে এসব মুদ্রা এবং আসবাব সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রাচীন যুগ থেকেই এসব মুদ্রা এবং আসবাব সংগ্রহ করেছেন তার পূর্বপুরুষরা। কুমিল্লার প্রাচীন জমিদার বাড়ি এবং বিভিন্ন নবাবদের বাড়ি থেকে এসব মুদ্রা সংগ্রহ করে দোকানের একপাশে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এসব মুদ্রা এবং আসবাবের বেশিরভাগই রুপার তৈরি। এসব মুদ্রার মধ্যে ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা, প্রাচীন পাকিস্তানি মুদ্রা, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের মুদ্রা, আমেরিকা, ইতালিসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের প্রাচীন মুদ্রা এবং বিভিন্ন আরব দেশের মুদ্রা রয়েছে এই মিনি জাদুঘরে।

আলমগীর খান আরও জানান, এসব মুদ্রা শুধু ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনেক ক্রেতা প্রচুর মূল্য দিয়ে কিনতে এলেও সেগুলো বিক্রি করছেন না তিনি। তবে এগুলো দেখতে অনেক দর্শনার্থী আসেন। দর্শনার্থীদের দেখার জন্যই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সেগুলো সংরক্ষিত আছে। তার স্বপ্ন তার তৈরি এই মিনি জাদুঘরে বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতে যারাই আসবে, তারা প্রাচীন এসব মুদ্রা এবং আসবাব দেখে তার কথা স্মরণ করবে। আরিফুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, তিনি যে উদ্যোগটা গ্রহণ করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তার কারণেই মূলত প্রাচীন এসব জিনিসপত্র দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, তা-ও আবার বিনা মূল্যে।

আবুল কালাম আজাদ নামের আরেক দর্শনার্থী জানান, ৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে প্রাচীন এসব মুদ্রা এবং আসবাব দেখতে এসেছি। নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে। আগে এসব জিনিসপত্র দেখতে জাদুঘরে যেতে হতো। এখন এখানে বিনা মূল্যে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। সেজন্য শাহ আলমগীর খানকে ধন্যবাদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বলেন, প্রাচীন এসব জিনিসপত্র এই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীনকালে এই জনপদের মানুষের জীবনমান, শিক্ষা, সংস্কৃতি কেমন ছিল তার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে এসবের মাধ্যমে। আমরা আলমগীর খানের তৈরি করা মিনি জাদুঘরটি দেখতে যাব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে যা করণীয় সব করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম