চাষে আশা দেখাচ্ছেন রাবি অধ্যাপক
নতুন পাঁচ জাতের কলার উদ্ভাবন
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কলা বাণিজ্যিক কৃষি পণ্য হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে বহু আগে। বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। ফলে দিন দিন কলা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের কলা চাষে এখনো ভারত বা থাইল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ কারণে কলার চাহিদা পূরণে অন্য কিছু ফলের মতো বিদেশ থেকে কলাও আমদানি হয়। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে প্রচলিত কলার ফলন কম। অধিক পচনশীল। দেশে অন্য ফল-ফলাদি নিয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু কলার নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম এখনো সীমিত।
এদিকে এই সংকটের মধ্যে ফুল থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঁচ ধরনের উন্নত কলার জাত উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় উন্নত কলার জাত উদ্ভাবনে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অধ্যাপক আনোয়ারের এই উদ্ভাবনে দেশে কলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। সম্প্রতি ড. আনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার উদ্ভাবিত কলার নতুন জাতের চারা প্রদর্শন করেছেন। চাষিদের মাঝে বিতরণও করেছেন। উদ্ভাবিত নতুন জাতের কলা অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। উচ্চ ফলনশীল ও কম সময়ে ফলন পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে রাবির এই গবেষকের চারা নিয়ে কলার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চাষিরা বলছেন, প্রচলিত সাধারণ কলার চেয়ে নতুন জাতের কলা চাষে শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র মতে, টিস্যু কালচার চারা লাগালে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ২ থেকে ৩ মাস আগে কলা সংগ্রহ করা যাবে।
রাবি উপাচার্য ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, টিস্যু কালচার কলা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই কৃষি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ড. আনোয়ারের নতুন উদ্ভাবিত কলার জাত ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সাড়া ফেলেছে চাষিদের মাঝেও।
ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে কলার চারা উদ্ভাবনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেন। এই গবেষণার জন্য ইউজিসি ও রাবি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করে। গবেষণায় কলার স্যুট টিপ বা ফুলের টিস্যু নিয়ে প্রথমে জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরে ল্যামিনার ফ্লো-এর ভেতরে টিস্যুকে কাচের পাত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রেখে, উদ্ভিদের বিভিন্ন রকমের হরমোন ও কৃত্রিম খাবার ব্যবহার করে ৫ থেকে ৬ মাস মাইক্রোস্যুট তৈরি করেন। পরে ওই মাইক্রোস্যুটগুলোতে হরমোন ব্যবহার করে শিকড় তৈরি করা হয়। এরপর ল্যাব থেকে বের করে পলি হাউজের ভেতর চারার থালায় বসানো হয়। এর একমাস পর চারাগুলোকে মাটির পলি ব্যাগে স্থানান্তর করা হয়। পলি হাউজের ভেতরে মাটির ব্যাগে চারাগুলোকে ২ থেকে ৩ মাস বিশেষ পদ্ধতিতে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো হয়। একপর্যায়ে মাঠে রোপণের উপযুক্ত হলে সেগুলো চাষিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের কলার টিস্যু কালচার চারা উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেন তিনি।
অধ্যাপক আনোয়ার আরও জানান, খাদ্য ও কৃষি পণ্যের উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে কলার অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ আমেরিকার দেশসহ ভারত বিশ্বে কলা উৎপাদনে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এসব দেশ কলা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কিন্তু বাংলাদেশের কলা ফেটে যাওয়া, কলার গায়ে কালো দাগ পড়া, কলার প্রমিত ও পর্যায়িতকরণ না থাকা, কলাতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে রপ্তানির শর্ত পূরণ করতে পারে না। তবে রাবিতে উদ্ভাবিত টিস্যু কালচার পদ্ধতির কলার চারা শতভাগ রোগ-জীবাণুমুক্ত, যা রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, সারা দেশের কৃষকদের পাঁচ জাতের চারা স্বল্পমূল্যে-বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে টিস্যু কালচার ল্যাবে চারা উৎপাদন করা সম্ভব। তবে টিস্যু কালচার চারা তৈরির পদ্ধতিগুলো এখনো প্যাটেন্ট করা হয়নি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাবির গবেষকদের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের কলার চারা ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় এই কলার চাষ হচ্ছে।
