হ্যাকারের কবলে চসিকের জন্ম নিবন্ধন আইডি
১৫ দিনে ৬০০ ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি, আটক ৫ * সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ মেয়রের
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) জন্ম নিবন্ধন শাখার আইডি পড়েছে হ্যাকারদের কবলে। প্রতিদিনই আইডি হ্যাক করে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া জন্ম সনদ। ৮ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত অন্তত ৬০০ ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে হ্যাকাররা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ ২৮টি জেলার স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে এসব সনদে। সবশেষ রোববার নগরীর ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৩৪১টি জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করা হয়। এরপরই সোমবার বিকালে চসিক কার্যালয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চসিকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় তিনি চসিকের সাইবার সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে ভুয়া জন্মনিবন্ধনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। সোমবার বিকালে চসিকের দুটি ওয়ার্ড থেকে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
চসিক মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, চসিকের জন্ম নিবন্ধন আইডি হ্যাক করে ৬০০ ভুয়া সনদ ইস্যু করার ঘটনায় জরুরি সভা হয়েছে। সভায় জন্ম নিবন্ধন সহকারীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের আইডিতে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৪০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে হ্যাকাররা। এ ব্যাপারে পরদিন বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জন্মনিবন্ধন সহকারি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন অপু। এরপর ১০ জানুয়ারি ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এই ওয়ার্ডে ১৯ জানুয়ারি ৫০টি এবং ২২ জানুয়ারি ৩৪১টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে হ্যাকাররা। এ ব্যাপারে হালিশহর থানায় জিডি করা হয়। অপরদিকে ৮ জানুয়ারি আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ইস্যু করা হয় ৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ১৪ জানুয়ারি জিডি করেন জন্মনিবন্ধন ডাটা এন্ট্রি সহকারী সঞ্জীব আচার্য। এছাড়া ১০ জানুয়ারি ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ১০টি এবং ২১ জানুয়ারি ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ৮৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এ নিয়ে মোট ৬০০ জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে হ্যাকাররা।
জানা গেছে, চসিকের জন্মনিবন্ধন আইডি প্রথম হ্যাক করা হয় ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন দেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল সার্ভারের আপগ্রেডেশনের কাজ চলার সময় হ্যাক করে ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৬ নম্বর চকবাজার ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এর মধ্যে ১২টি ছিল রোহিঙ্গার নামে। এ ঘটনায় পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট জন্মনিবন্ধন সহকারিরা।
জানতে চাইলে ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. রহিম উল্ল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, জন্মনিবন্ধন ইস্যু করতে গিয়ে দেখা যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নম্বর পড়ছে। তখনই হ্যাক হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। এর পর থেকে আমরা জন্মনিবন্ধন ইস্যু বন্ধ রেখেছি। যেসব ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন শাখায় এই সমস্যা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন সহকারীরা বাদি হয়ে থানায় মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ মেয়রের : ইন্টারনেটনির্ভর সেবা খাতের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং হ্যাকিং থেকে সতর্কতার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সোমবার নগরীর টাইগারপাস চসিক সম্মেলন কক্ষে কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন। মানুষ এখন সহজে ঘরে বসেই সিটি করপোরেশনের সেবা নিতে পারছে। তবে বিশ্বজুড়েই সক্রিয় হ্যাকাররা। তারা এ ধরনের সেবাগুলোকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের সাইবার হুমকি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাইবার নিরাপত্তার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জন্মনিবন্ধনসহ সব ধরনের অনলাইন সেবাদানকারী কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরকেও এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হ্যাকিংয়ে ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হলেও মূলত হ্যাকিং হয়েছে ঢাকার সার্ভার। এ বিষয়টি অবগত হওয়ার পরই আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি ও মামলা করেছি।
