Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

‘তিতাস একটি নদীর নাম’ মুক্তির ৫০ বছর

তিতাসের স্রোতধারায় দেশভাগ অনুভব

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের কালজয়ী এক চলচ্চিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্র তিতাস নদীর ওপর নির্ভরশীল মালো সমাজের জীবনের ভাঙাগড়া আর আনন্দ-বেদনার এক মহাকাব্য। বিশাল ক্যানভাসে বড় পর্দায় যার রূপদান হয়েছিল কিংবদন্তি নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের হাতে। ১৯৭৩ সালের ২৭ জুলাই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল। খাতা-কলমে হিসাব করলে ৫০ বছর আগে আজকের এই দিনে।

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন আবুল খায়ের, গোলাম মুস্তাফা, রওশন জামিল, রাণী সরকার, সিরাজুল ইসলাম, খলিল, রোজী সামাদ, প্রবীর মিত্র, কবরী, আবুল হায়াতসহ অসংখ্য গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী। যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। প্রধান চরিত্রগুলোর অভিনেতাদের মধ্যে বেঁচে আছেন ‘কিশোরচান মল্লবর্মণ (কিশোর)’ চরিত্র রূপদানকারী অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তিনিও আজ শয্যাশায়ী। চলচ্চিত্রটিতে শুটিং সময়ের স্মৃতিচারণ করতে বললে বেশি কিছু মনে করতে পারলেন না। তবে পরিচালক ঋত্বিক ঘটক কীভাবে তাকে নির্বাচন করেছিলেন সে বিষয়ে যুগান্তরকে প্রবীর মিত্র বললেন, কোনো অডিশন বা স্ক্রিন টেস্ট বলতে যা বোঝায় তার কিছুই আমার বিষয়ে করলেন না। তিনি একদিন এক খোলা প্রান্তরে সূর্যের আভার দিকে মুখ করে আকাশের দিকে তাকাতে বললেন। আমিও তাই করলাম। তিনি দেখলেন, তারপর বললেন ঠিক আছে। আমাকে কিশোর চরিত্রের জন্য নির্বাচন করলেন।

চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন খ্যাতিমান প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। যিনি পরবর্তীতে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘মনের মানুষ’-এর মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে ঋত্বিক ঘটক এবং তিনি কীভাবে একত্রিত হলেন জানতে চাইলে বলেন, আমি নিজেই ঋত্বিক দাকে খুঁজে বের করেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে তিনি একমাত্র চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি দেশভাগকে মানেননি। তার যে দুঃখ, সেই একই দুঃখ আমারও। সে কারণেই আমি তাকে খুঁজে বের করেছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে বেঙ্গল একটা নেশন, কিন্তু এটাকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

চলচ্চিত্রটির শুটিং, লোকেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো চলচ্চিত্রটির শুটিংয়ের সময়টি আমাকে নাড়া দেয় আজও। ১৯৭২ সালে শুটিং শুরু হয়। মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালের ২৭ জুলাই। আমি এবং ঋত্বিক দা ছবির লোকেশন দেখার জন্য তিতাস নদীর পাড়ে গেলাম। গাড়ি থেকে তিনি নেমে তিতাসের বুকে পা ডুবালেন যতদূর সম্ভব। তারপর চোখে-মুখে তিতাসের পানি নিয়ে ঝাপটা মারতে শুরু করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তুই বুঝবি না আমার দুঃখটা! আমি যে এই তিতাসে আসতে পেরেছি, তিতাস নিয়ে চলচ্চিত্র করছি, এটা অনুভব করছি নদীর বহমান পানি দিয়ে।

সেই সময়ের দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে হাবিবুর রহমান খান বলেন, সিনেমাটি মুক্তির পর মানুষের প্রতিক্রিয়া খুবই খারাপ ছিল। জোনাকি সিনেমা হলে গিয়ে দেখি সবাই গালি দিয়ে বলছে, কে এই ছবি বানাইল!

আপনি কি বুঝেছিলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ একটি ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রের মর্যাদা পাবে? হাবিবুর রহমান খান বলেন, আমার বয়স তখন মাত্র ২৭ বছর। অতটা বুঝিনি। কিন্তু ঋত্বিক দা আমাকে বলেছিলেন, ‘সিনেমাটা টুয়েন্টি ইয়ার্স এহেড বানাইলাম। কিপ ইট ইন মাইন্ড।’ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বিরাট ক্যানভাসের সিনেমা। ১৯৭২-৭৩ সময়ে ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল এটি নির্মাণ করতে। অথচ তখন ১ লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকায় সিনেমা নির্মাণ হতো। আজকে ভালো লাগে যে, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সাড়া জাগানো ছবি। আর সিনেমাটির প্রযোজক আমি। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র চলচ্চিত্র যেটি ক্ল্যাসিক সেকশনে দেখানো হয়।

ফিল্ম আর্কাইভ সূত্রে জানা গেছে, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রের ডিজিটাল কপি সেখানে রক্ষিত আছে। আছে প্রিন্টেড কপিও। চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন খ্যাতিমান বেবী ইসলাম, সংগীত পরিচালনা করেন ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম