Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

বীর নিবাসেই ঘর পাবেন বীরাঙ্গনারা

প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা * প্রতি বর্গফুটে ব্যয় ২ হাজার ৫৮০ টাকা * এখনো কোনো বীরাঙ্গনা ঘর পেয়েছেন কিনা জানা নেই -মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী

Icon

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যা নিরসনে পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ১১ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ১১ হাজার ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় বীরাঙ্গনারাও সুবিধা পাবেন। তবে কতজন বীরাঙ্গনা প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাবেন তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। সুবিধাভোগী নির্বাচনে অনিয়ম এবং ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপকারভোগী নির্বাচনে উপজেলা পর্যায়ে কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত। এ কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সমাজসেবা কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের প্রকৌশলী রয়েছেন। সাচিবিক দায়িত্বপালন করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। নিয়ম অনুযায়ী-উপজেলায় ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা থাকলে শতকরা ১৪ শতাংশ সরকারি পাকা ঘর পাবেন। তবে উপকারভোগী নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো নির্দিষ্ট প্রকৌশলী নেই। উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী ঘর নির্মাণের তদারকি কাজ করেন। প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকার ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয় করছে। ৭২০ বর্গফুটের একটি ঘরে দুটি বেড রুম, দুটি বাথরুম, একটি ড্রয়িং, ডাইনিং ও একটি কিচেন। প্রতি প্রতিবর্গ ফুট ঘর তৈরিতে বরাদ্দ ২ হাজার ৫৪০ টাকা ৫৫ পয়সা। তবে ঘর পেতে নিজস্ব জমি থাকতে হবে। কাউকে জমিসহ ঘর তৈরি করে দেবে না সরকার। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, শতভাগ বীরাঙ্গনাকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। তবে তাদের জন্য আলাদা কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। বরং অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের আওতায় তারা সুবিধা পাবেন। তবে তাদের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। কারণ জমিসহ ঘর দেওয়া যাবে না। কতজন বীরাঙ্গনা আবাস সুবিধা পাবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে সবাই পেয়ে যাবেন। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের ব্যবস্থা নিই। সুযোগ পেলে কাজে ফাঁকি দিতে চায়। অনিয়ম রোধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সরকার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। ৩০ হাজার ঘর নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কোনো বীরাঙ্গনা আছেন কিনা আমার জানা নেই। তিনি আরও জানান, বীরাঙ্গনাদের জন্য আলাদা করে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তারাও মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং তারাও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাবেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাজারে একটি অভিযোগ হয়। আমরা ব্যবস্থাও নিই। আর উপকারভোগী নির্বাচনে আমাদের কোনো হাত নেই। উপজেলা কমিটির তালিকাই চূড়ান্ত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তৈরিতে নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, ব্যবহারের অভিযোগ প্রায়ই আসে। আমরা অভিযোগগুলো প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিই। এরপর কী হয় তা জানি না। তবে মাঝে মধ্যে মন্ত্রণালয়ে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ইউএনওদের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিবেদন আসে। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বীর নিবাস নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সত্য। আমাদের কাছেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম