পোশাক শিল্পে অস্থিরতা নেপথ্যে ঝুট ব্যবসা
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মদদের ইঙ্গিত ব্যবসায়ীদের
মতিউর রহমান ভান্ডারী, সাভার
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকার পরিবর্তনের পর শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংকট শুরু হলেও শ্রমিকদেরও বেশ কিছু ন্যায্য দাবি রয়েছে। তারা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভের মাধ্যমে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দাবিগুলো আদায়ের চেষ্টা করছেন। আর এই শ্রমিকদের পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে আন্দোলন বেগবান করছে শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারীদের একটি অংশ। মূলত, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিকদের আন্দোলনের আগুনে ‘ঘি’ ঢালছে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দলীয় নেতাকর্মীরা সাভার ও আশুলিয়ার শিল্প কারখানাগুলোর ঝুট, পলি, কার্টুন, শ্রমিকদের নাস্তা ও এক্সেসরিজসহ ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এজন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে এসব ব্যবসায়ীর লিখিত চুক্তিও রয়েছে। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি বছরজুড়ে চলমান থাকে। তবে হঠাৎ ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই ব্যবসাগুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানার ব্যবসা দখলে নিয়েছেনও। কিছু কারখানা দখলের বাকি রয়েছে। কারণ, এসব কারখানায় পূর্বের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশকিছু লেনদেনের বিষয় এখনো রয়েছে। ফলে কিছু শিল্প উদ্যোক্তা বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে ব্যবসা হস্তান্তর করতে ইতঃস্তত করছেন। আর এখান থেকেই মালিকপক্ষের সঙ্গে কিছুটা দূরত্বের সৃষ্টি হয় তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক না হওয়ার কারণে সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলনের আগুনে তারা পরোক্ষভাবে ঘি ঢেলে আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করছেন। এতে পোশাক শিল্পে বিরাট অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। দ্রুত শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান না করা হলে আগামী কার্যাদেশ অনিশ্চিত হতে পারে। কার্যাদেশ অনিশ্চিত হলে, মারাত্মকভাবে এর ফল ভোগ করতে হবে। তাই মুষ্টিমেয় লোকের স্বার্থে পোশাক শ্রমিকদের উসকে না দিয়ে শিল্প এলাকায় স্বস্তি ফেরানোর আহ্বান জানান তারা।
এর সঙ্গে অনেকটাই একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু। তিনি বলেন, শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের প্রধান কারণ ঝুট, ক্যাটারিং ও টিফিন ব্যবসা। এই ব্যবসাগুলো মাসখানেক আগেও আ.লীগের নেতাকর্মীরা করতেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা এসব ব্যবসা নিজেদের দখলে নিয়েছেন। কিছু কারখানার মালিকের সঙ্গে তাদের বনিবনা হয়নি। যার জন্য শ্রমিক আন্দোলনে বহিরাগতদের যুক্ত করে পোশাক শিল্প এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। মালিকপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এখানে তৃতীয়পক্ষের প্রয়োজনও হবে না। তাই মালিকপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে শিল্প পাড়ায় দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার।
বিক্ষোভে বহিরাগতরা : আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার রেডিয়েন্স জিন্স অ্যান্ড ফ্যাশন কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কারখানার শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া নেই। সেদিন বহিরাগতরা কারখানার সামনে এসে শ্রমিকদের উসকে দেয়। এ অবস্থায় কারখানাটি ওইদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে, গত বৃহস্পতিবার থেকে আমাদের কারখানা চালু রয়েছে। একই অভিযোগ আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার নাসা গ্রুপের বেসিক গার্মেন্টসের এইচআর অ্যাডমিন মো. হাবিবের। তিনি বলেন, গত বুধবার কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা কাজে ফিরে। এর মধ্যে হঠাৎ কিছু লোক এসে কারখানায় হামলা করে। পরে শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই দিন কারখানা ছুটি ঘোষণা করি। তবে, গত শনিবার থেকে আবার চালু রয়েছে।
চাঁদা দাবির অভিযোগ : আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার এক কারখানার মালিক অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি নেতারা কেউ কেউ চাঁদা দাবি করছেন। যারা তাদের ব্যবসায়িক দাবি মেনে নিচ্ছেন কিংবা চাঁদা দিচ্ছেন, তাদের কারখানায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের সঙ্গে যারা ঝুট ব্যবসাসহ অন্যান্য লেনদেন করছেন না তাদের কারখানায় শ্রমিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। আমাদের সাবেক সংসদ-সদস্য দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর নাম লোক মারফত শুনতে পাচ্ছি। আমরা দলের পক্ষ থেকে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি-ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।
