Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য

৩৪ লাখে নির্মাণ নিরাপত্তায় কোটি টাকা, এখন নেই অস্তিত্ব

Icon

এ এম জুবায়েদ রিপন, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশের মুখে পাঁচ রাস্তার মোড় লোহার খুঁটি ও শিকল দিয়ে ঘেরা। মাঝে পড়ে আছে ফাঁকা জায়গা। ৫ আগস্টের আগে ওই স্থানে ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সেটি ভেঙে ফেলা হয়। নির্মাণের মাত্র চার বছরে নানা ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য। নির্মাণাধীন অবস্থায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় দেশব্যাপী হয়েছিল ব্যাপক আলোচিত। বিনা অপরাধে মাদ্রাসার দুই ছাত্র তিন বছর ৮ মাস এবং দুই শিক্ষক দুই বছর ৬ মাস কারাগারেও ছিলেন। ভাস্কর্য নিয়ে আরেক ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয়েছিল তিন পুলিশ সদস্যকেও। অন্যদিকে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করা হয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রায় চার বছর পুলিশি প্রহরায় ছিল বঙ্গবন্ধুর এ আলোচিত ভাস্কর্য। সব ঘটনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সেই আলোচিত ভাস্কর্যের পতন হয়েছে। বর্তমানে এর কোনো অস্তিত্বই আর নেই।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল কুষ্টিয়া পৌরসভা। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও ৫ ডিসেম্বর রাতে ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। গ্রেফতার করা হয় দুই মাদ্রাসার শিক্ষক ও দুই শিক্ষার্থীকে। তৎকালীন কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীনের মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজন হলেন কুষ্টিয়ার জগতি পশ্চিমপাড়ার ইবনি মাসউদ (র.) মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আলী ও আল আমিন এবং একই মাদ্রাসার ছাত্র মিঠুন ও নাহিদ। গ্রেফতার চারজনের মধ্যে দুই শিক্ষক ইউসুফ আলী ও আল আমিনকে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি অব্যাহতি দেন আদালত। অপর দুই মাদ্রাসাছাত্র মিঠুন ও নাহিদকে ৭ অক্টোবর খালাস দেন কুষ্টিয়া নারী ও শিশু আদালত। অভিযোগ রয়েছে, শিশু হওয়া সত্ত্বেও তাদের বারবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এমনকি হাফেজদের মুখের ওপর পুলিশ বুট দিয়েও লাথি মেরেছে বলে জানান মাদ্রাসাছাত্র নাহিদ। তিনি বলেন, এখনো আমার মুখের ওপর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর ৮ মাস বিনা অপরাধে কারাগারে ছিলাম। ২২ বার আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। পুলিশ চরম অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। নাহিদ জানান, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট আমরা জামিন পেয়েছি এবং ৭ অক্টোবর আদালত আমাদের খালাস দেন। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের পর বসানো হয় পুলিশি পাহারা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন পর্যন্ত ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় তিনজন কনস্টেবল ও একজন এসআই বা এএসআই দায়িত্ব পালন করতেন। ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টাই তারা নিরাপত্তায় থাকতেন। এসব পুলিশ সদস্যের সরকারি স্কেল হিসাবে প্রতি মাসে বেতন বাবদ খরচ হতো প্রায় ৩ লাখ টাকা। ৩ বছর ৮ মাস ধরে এভাবেই চলেছে পুলিশি পাহারা। হিসাব অনুযায়ী ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২৪ ঘণ্টাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় পুলিশ বসে থাকত। একজন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিনজন কনস্টেবল নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন বলে তিনি জানান। ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর উঠে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি। ভাস্কর্যের মাথার ওপর বসে তিনি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৩ কনস্টেবলকে সাময়িক সাসপেন্ডও করে কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্টের আগের দিন ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রথম ওই ভাস্কর্যে হামলা করা হয়। ওইদিন বিক্ষুব্ধ জনতা হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যের সামান্য কিছু অংশ ভেঙে ফেলে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের দিন ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন ক্রেন দিয়ে সেটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে ছাত্র-জনতা। কয়েকদিন ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকার পর নির্মাণকারী সেই পৌর কর্তৃপক্ষই ভেঙে ফেলা ভাস্কর্য অপসারণ করে। কুষ্টিয়া পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মো. জুবাইর মাহাবুব বলেন, ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিল কুষ্টিয়া পৌরসভা। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ভাস্কর্যের ভেঙে ফেলা অংশ রাস্তার মধ্যে চলে আসে। ওই অবস্থায় জনসাধারণে চলাচলের অসুবিধার কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলা ভাস্কর্য অপসারণ করেন। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, একটি পরিস্থিতির কারণে এবং শহরের ওই স্থান অত্যন্ত জনবহুল হওয়ায় পুলিশের একটি টিম সব সময় সেখানে রাখা হতো এবং পুলিশের টহল টিমও ওই এলাকায় নজরদারি রাখত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম