Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সূর্যাস্ত দেখার রোমাঞ্চকর অনুভূতি

তমাতুঙ্গীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

থানচিতে ভ্রমণ বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার দাবি

Icon

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান। এ জেলার পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে উঠা পর্যটন স্পট ‘তমাতুঙ্গী’ থেকে সূর্যাস্ত দেখার রোমাঞ্চকর অনুভূতি পেতে সারা বছরই ভিড় করেন পর্যটকরা। থানচি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত সড়কের চার কিলোমিটার পয়েন্টে মুগ্ধতা ছড়ানো এই পর্যটন স্পটটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে তমাতুঙ্গীর উচ্চতা প্রায় আড়াই হাজার ফুট। তমাতুঙ্গীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে আরও তিনটি দর্শনীয় পর্যটন স্পটের দেখা মিলবে। তমাতুঙ্গী যেন একের ভেতরে চার।

অন্যগুলো হলো-দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বা পাহাড়ের চূড়া তজিংডং বিজয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং। আর দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথ বা ডিম পাহাড় চূড়াও। দুচোখে যেদিকেই তাকাই শুধু সবুজের সমারোহ। সারি সারি পাহাড়ের চূড়া। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে, পাহাড়ে হেলান দিয়ে আছে সাদা মেঘ। যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। স্থানীয় দর্শনার্থীদের পদচারণায় সারা বছরই মুখরিত থাকে পর্যটন স্পটটি। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবোচনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানচি ভ্রমণে পর্যটকদের সাময়িকভাবে নিরুৎসাহিত করার ঘোষণায় ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা এখন খুব একটা নেই বললেই চলে।

দর্শনীয় স্পটটি ঘুরে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা পর্যটন স্পটটি ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভ্রমণকারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এখানে সীমান্ত সড়কের দুপাশে দুটি ভিড পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। এক প্রান্তে সিঁড়ি বেয়ে উঠে একটি সৌন্দর্য অবলোকন টাওয়ার, ১টি পানির ফোয়ারা, গোল কাঠের তৈরি একাধিক বসার সিট রয়েছে। অপর প্রান্তে খোলা জানালা বা ফটকের আদলে শিল্পকর্ম, দর্শনার্থীদের হাঁটাচলার জন্য বিশাল চত্বর, বিশ্রামের জন্য চার পাশে একাধিক বসার পাকা সিট এবং মধ্যখানে ভাস্কর্যের মতো একটি শিল্পকর্ম রয়েছে।

দর্শনীয় পর্যটন স্পটটির সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিষয় হলো পাহাড়ে সূর্যাস্ত দেখা। পড়ন্ত বিকালে বা গোধূলি বেলায় হলুদ কমলা রঙের আভায় গোটা পাহাড় চূড়াটি রোমাঞ্চকর অন্যরকম এক রূপ ধারণ করে, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সন্ধ্যা নামার পর চাঁদের আলোয় তমাতুঙ্গী পাহাড় চূড়াটি হয়ে উঠে আরও বেশি রহস্যময়। তবে নিরাপত্তা বিবেচনায় রাতের বেলায় স্পটটিতে বেশিক্ষণ অবস্থান করা বিপজ্জনক। স্থানীয় প্রশাসনেরও বিধিনিষেধ রয়েছে। থানচি সদর থেকে তমাতুঙ্গী পর্যটন স্পটের দূরত্ব পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কে ৪ কিলোমিটার। আর বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৮৯ কিলোমিটার। মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট ও ভাড়ায় চালিত যে কোনো চার চাকার গাড়িতেই ভ্রমণ করা যাবে। স্থানীয় দর্শনার্থী মোহাম্মদ শহীদ, অনিল ত্রিপুরা বলেন, তমাতুঙ্গী হচ্ছে বহুরূপী। পর্যটন স্পটটির সৌন্দর্য একেক সময়ে একেক রকম লাগে। শীতের সকালটা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। আর বর্ষায় মেঘেরা লুকোচুরি খেলে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যাস্ত দেখা। পড়ন্ত বিকাল বা সন্ধ্যা নামার আগমুহূর্তে হলুদ রঙের আভায় তমাতুঙ্গীর আশপাশের পাহাড়গুলো অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ায়, যা নিজের চোখে না দেখলে প্রকাশ করা কঠিন। চাঁদের আলোয় তমাতুঙ্গীর সৌন্দর্য আরও বেশি ফুটে ওঠে। দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সীমান্ত সড়ক এবং দেশের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ারও দেখা মেলে। তবে স্পটটি স্থানীয়দের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও পর্যটকদের ভ্রমণে সাময়িক বিধিনিষেধ রয়েছে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার প্রভাব পড়েছে গোটা থানচি উপজেলায়। সবকিছুই যেন থমকে গেছে এখানে। শুধুমাত্র পর্যটক না থাকায় মন্দাভাব নেমেছে সবধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে। সন্ধ্যার আগেই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট-থানচি বাজারের অলিগলি। অথচ পর্যটন চালু থাকলে মানুষের উপস্থিতিতে মধ্যরাত পর্যন্ত সরব থাকতো থানচি বাজার এলাকা। স্থানীয়দের আয়-রোজগার ও ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা করতে সীমিত পরিসরে থানচিতে পর্যটন খুলে দেওয়ার দাবি তাদের। এ প্রসঙ্গে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে থানচিতে। তমাতুঙ্গীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় দর্শনার্থীরাও। তবে থানচিতে পর্যটকদের ভ্রমণে সাময়িক বিধিনিষেধ রয়েছে। পর্যটন খুলে দিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম