সড়ক পথে ঈদযাত্রা
ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

জাফর আহমেদ, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন ঈদে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপসহ নানা কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটে চরম ভোগান্তির শঙ্কা করছেন মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। তবে প্রকল্প ম্যানেজারের দাবি, ঈদে চার লেনের সুবিধা পাবে ঘরমুখো মানুষ। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলছেন, নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা করতে ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়কে পালাক্রমে সাড়ে ৭০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
সাসেক ২ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফেইজ ৫ অংশে ৪ বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ! ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কার্যাদেশ পাবার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনায়েমের ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ঈদে মহাসড়কের চার লেন চালুর কথা বলা হলেও বেশির ভাগ অংশে মূল সড়কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
যমুনা সেতু সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যান পারাপার হলেও বিগত ঈদে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ হাজারের অধিক যান সেতু পারাপার হয়েছে। মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে টাঙ্গাইল অংশে কাজের ধীরগতি। এছাড়াও এ অংশ দিয়ে উত্তরাঞ্চলসহ আশপাশের ২৩ জেলার লাখ লাখ মানুষ মহাসড়কটি ব্যবহার করে থাকে। তাই চার লেনের কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েকগুণ বেশি যানবাহনের চাপসহ নানা কারণে তারা চরম ভোগান্তির শঙ্কা করছেন।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে অনেক সময় টোল আদায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে এবং সেতুর ওপর দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে থাকে। অন্যদিকে যমুনা সেতুর পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস না হলে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক ঈদেও সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস না হওয়ায় যমুনা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ ছিল। এতে করে টাঙ্গাইল অংশে দীর্ঘ যানজট হয়েছিল।
এছাড়া প্রতি বছরই ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্কড়ঝক্কড় এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করেন। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতেও উভয় পাশের গাড়ি থেমে যায়। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী ও ভাবলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারার সড়কও সংস্কার করা হচ্ছে।
শ্যামলী পরিবহণের চালক আব্দুল আজিজ বলেন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন ও বেপরোয়া গতির যানবাহন, যেখানে সেখানে ওভারটেকিংসহ নানা কারণে যানজটের ভোগান্তি হতে পারে। পুলিশের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে বালু রয়েছে। একটু বৃষ্টি বা অন্য কোনো পানি পেলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এ মহাসড়কের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরবঙ্গগামী পুরো লেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আশা করছি ১৮ মার্চ থেকে এই লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে আলাদা বুথ থাকবে। এছাড়াও যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুর ওপরে অব্যবহৃত রেললাইনের সাড়ে ৩ মিটার জায়গাও বাড়ানো হবে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে আমরা যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। যানজট নিরসনে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটারে জেলা পুলিশের সাড়ে ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া মহাসড়কে মোবাইল টিম কাজ করবে। মহাসড়ককে ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চ থেকে মহাসড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। ঈদের পরও যানজট নিরসনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আশা করছি মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে না।