যুবদল নেতার অডিও ভাইরাল
‘বাঁচতে চাইলে দ্রুত এক লাখ টাকা বিকাশ করো’

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন নয়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারীকে মোবাইল ফোনে বলেছেন, ‘বাঁচতে চাইলে দ্রুত এক লাখ টাকা বিকাশ করো।’ শুক্রবার নয়নের চাঁদা দাবির কথোপকথনের বেশ কিছু অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি জেলা যুবদলের ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। আর হুমকির শিকার মো. সাকায়েত উল্যাহ শিপন একই উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের চন্দ্রশুদ্ধি গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে। তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসাবে কর্মরত আছেন।
একটি অডিও’তে শিপনকে ফোন দিয়ে নয়নকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে চাকরি দিয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য)। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আপনি নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট করেছেন, ডোনেশনও দিয়েছেন। তাই আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আমাকে এক লাখ টাকা দেবেন। না দিলে এটার পরিণাম কী হবে তা চিন্তাও করতে পারবেন না। আর এ কথা যদি আপনি-আমি ছাড়া তৃতীয় কানে যায় তাহলে আপনার ঘাড় বাঁকা করে ফেলব। এটা যেন মনে থাকে। এটাকে থ্রেড (হুমকি) মনে করলেও করতে পারেন।
শিপন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে যুবদল নেতা নয়ন উদ্ভট কথা বলে প্রতিনিয়ত এক লাখ টাকার জন্য ফোনে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। না দিলে আমাকে হত্যাসহ বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। গ্রামের বাড়িতে আমার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী, চার শিশু সন্তান ও মা-বাবা থাকেন। আমি তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কলরেকর্ড ও মোবাইল নম্বরসহ ঢাকার শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, সাকায়েত উল্যার অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভাইরাল ও ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড নিজের বলে নিশ্চিত করে নয়ন বলেন, এই সাকায়েত উল্যা শিপন বিগত সময়ে আমাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করেছে। যার পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হবে। তাই তাকে এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে ঝগড়ার মতো হয়ে গেছে। তাই কিছু গালমন্দও করেছি।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নেতারা জানার পর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আমি চুপচাপ আছি। এখন আমাদের কমিটি ঘোষণার কথা চলছে। আমি উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এ মুহূর্তে কেউ ষড়যন্ত্র করে আমার কাটছাঁট করা অডিও ভাইরাল করে দিয়েছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।
জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। এভাবে টাকা দাবি করা অন্যায়। কিন্তু দলের কতিপয় নেতার জন্য আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদ বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে খুবই কঠোর। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেব।