Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

‘পেঁয়াজের হিমাগার’ তৈরি হচ্ছে ফরিদপুরে

এয়ার ফ্লো মেশিন খুঁজছেন অন্য জেলার চাষিরাও

জাহিদ রিপন

জাহিদ রিপন

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এয়ার ফ্লো মেশিন খুঁজছেন অন্য জেলার চাষিরাও

পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খ্যাত ফরিদপুর। উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে এ জেলায় বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন। স্থানীয় কৃষকদের কাছে তা ‘পেঁয়াজের হিমাগার’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। অল্প খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণে বেশ চাহিদা বেড়েছে এ মেশিনের। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের অম্বিকাপুর বাজারে ‘মা মেটাল’ নামে এক কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে এ মেশিন। জেলার অনেকেই কিনে নিচ্ছেন এ মেশিন। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য নিজ এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মেশিনটি।

সাধারণত মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের দাম কম থাকে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা লাভের মুখ দেখার আগেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হন। প্রচলিত পদ্ধতিতে ঘরের মধ্যে বাঁশের মাচা বা চাঙে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হয় তাদের। কিন্তু অধিক তাপমাত্রায় ঘেমে পচে যাওয়া, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অতিরিক্ত জলীয়বাষ্পে পচন ধরা ও রং নষ্ট হয়ে কালো হওয়াসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় চাষিদের। এতে চাষিরা মৌসুমের শেষ দিকে পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি থেকে বঞ্চিত হন। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানিসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরামর্শক দলের ভ্যালুচেন বিশেষজ্ঞরা ‘বায়ুপ্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’ প্রযুক্তির এই এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর বাজারে মেশিন তৈরির কারখানায় (মা মেটাল) গিয়ে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক মেশিন তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাহিদা বেশি থাকায় দিন-রাত সমানতালে কাজ চলছে তাদের। বিভিন্ন স্থান থেকে এয়ার ফ্লো মেশিন কিনতে আসছেন ক্রেতারা। অনেকে মোবাইলে টাকা পেমেন্ট করে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিচ্ছেন এয়ার ফ্লো মেশিন।

‘মা মেটাল’র মালিক মহিদুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে তিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে দশটি মেশিন তৈরির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এরপর গত ২ বছরে ৯৭টি মেশিন তৈরি করেন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। চলতি বছরের গত তিন মাসে তিনি প্রায় ৪০০টি মেশিন তৈরি করেছেন। যা ফরিদপুর জেলা ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পেমেন্ট করে অনেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ মেশিন নিচ্ছেন।

তিনি জানান, তার এখানে তিন সাইজের মেশিন তৈরি হচ্ছে। ১০ টনের একটি মেশিনে প্রায় (২৫০ মন পেঁয়াজ রাখা যায়) যার দাম ১৫ হাজার টাকা। ১২ টনের মেশিনের দাম (৩০০ মন পেঁয়াজ রাখা যায়) ১৭ হাজার ও ৪০০ মন পেঁয়াজ রাখা যায় এ সাইজের মেশিনের দাম ২০ হাজার টাকা।

মেশিন তৈরির কারখানার মালিক মহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এই মেশিনের মাধ্যমে নিচে বাতাস টেনে আটকে দেয়। পরে সেই বাতাস পেঁয়াজের ভেতর দিয়ে বের হয়। এতে পেঁয়াজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে। পেঁয়াজ পচে না। নষ্ট পেঁয়াজ থাকলে সেটি নিজে থেকেই শুকিয়ে যায়, যার ফলে পাশের পেঁয়াজকে নষ্ট করত পারে না।

মেশিন ক্রয় করতে আসা সালথা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি রবিউল বলেন, এ মেশিনে পেঁয়াজ ভালো থাকে। আমাদের ওখানে কয়েকজন কিনেছে, পেঁয়াজ ভালো থাকছে। রাখি করে পরে বিক্রি করলে দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই তিনি এ মেশিন কিনতে এসেছেন।

জেলার নগরকান্দা থেকে মেশিন কিনতে আশা বজলু শেখ বলেন, এ মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ ভালো থাকে, তাই এবার দুটি মেশিন কিনতে এসেছি। আর মেশিনের দামও হাতের নাগালের মধ্যে। বিদ্যুতেও সাশ্রয়।

পেঁয়াজ চাষি চাঁন মিয়া বলেন, একটি ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর বাঁশের চাটাই বিছিয়ে তার মধ্যে এই যন্ত্রটি স্থাপন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে আট মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ রাখা যায়। আর একশ বর্গফুট জায়গায় প্রায় ২শ মন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে মাসে মাত্র ছয়শ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর বাইরে তেমন খরচ নেই।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ চাষিদের জন্য এ মেশিনটি বেশ সুফল বয়ে এনেছে। জেলায় প্রায় কয়েকশ কৃষক এ মেশিন ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ৬০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে এয়ার ফ্লো মেশিন বিতরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চলতি বছর ২৪০ জন কৃষকের মাঝে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মেশিন ক্রয় বাবদ প্রতিজন কৃষককে ২৭ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হবে। পরবর্তী বছর ৩৬০ জন কৃষককে জনপ্রতি ২৭ হাজার টাকা করে মেশিন ক্রয়ের জন্য প্রদান করা হবে।

পেঁয়াজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম