সরকারি চাল বিভিন্ন নামের বস্তায় প্যাকেট করে বিক্রি
খুলনায় নেই অভিযান
নূর ইসলাম রকি, খুলনা
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
খুলনার বাজারগুলোয় সরকারি চাল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও কোনো অভিযান বা ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বাজার কমিটি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করা হচ্ছে বলে চাল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি খুলনার দৌলতপুর বাজারে নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি চাল মজুতের বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
জানা যায়, দৌলতপুর তুলাপট্টির পাশে মেসার্স কাদের ট্রেডার্সে নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দ প্রায় ৪ হাজার বস্তা সরকারি চাল মজুত রয়েছে। এসব চাল সরকারি বস্তা থেকে খুলে নুরজাহানসহ বিভিন্ন নামের বস্তায় প্যাকেটিং করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী শাহাবুদ্দিনের চাল গোডাউনে মজুত করা হয়েছে ঢাকা থেকে আনা রেশনের কয়েক টন চাল। এছাড়া মানিকতলা এলাকার সিফাত এন্টারপ্রাইজেও হাজার হাজার বস্তা সরকারি চাল মজুত রয়েছে। সংবাদ না করার জন্য এ সময় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়।
জানা যায়, খুলনার সিএসডি গোডাউন থেকে নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা ৩৭০ মেট্রিক টন চাল নীলফামারীর শামসুল হক অটো রাইস মিল কর্তৃপক্ষ বুঝে নেন। এরপর তারা খুলনার দৌলতপুরের কাদের ট্রেডার্সকে ১৯০ মেট্রিক টন ও সিফাত এন্টারপ্রাইজকে ১৮০ মেট্রিক টন চাল দেন। এ ঘটনার পর কাদের ট্রেডার্সের মালিক তার শ্রমিকদের নিয়ে সরকারি সাদা বস্তা থেকে চাল বের করে বিভিন্ন নামের ২৫ কেজি বস্তায় সেগুলো প্যাকেটিং করেন। পার্শ্ববর্তী চাল ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিনও সরকারি রেশনের চাল ঢাকা থেকে কিনে তার গোডাউনে মজুত করে একইভাবে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার পথে হাঁটছেন।
এ বিষয়ে কাদের ট্রেডার্সের মালিক যুগান্তরকে বলেন, নীলফামারীর প্রতিষ্ঠানকে এ চাল ভিন্ন বস্তায় তারা সরবরাহ করবে। পাশাপাশি মরা ও নষ্ট চাল তারা বাছাই করবে। এ ধরনের চুক্তির বিনিময়ে তার গোডাউনে চাল মজুত করা হয়েছে। তারা এই সরকারি চাল বিক্রি করে না। নীলফামারীর প্রতিষ্ঠান কী করবে, সেটা তারা জানে না। তারাও আরও জানান, সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র তাদের কাছে আছে।
অপর চাল ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জানান, তিনি ঢাকা থেকে রেশনের চাল কিনেছেন। তার কাছে সব কাগজপত্র আছে। তবে সরকারি চাল এভাবে কিনে ভিন্ন নামে বস্তায় বিক্রি করা অপরাধ কি না জানতে চাইলে তিনি পরে দেখা করতে বলেন। এ বিষয়ে দৌলতপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নান্নু মোড়ল যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। আমরা চাল ব্যবসায়ীদের ডেকে বিষয়টি খোঁজ নেব। কোনো অন্যায় হলে অবশ্যই যথোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম যুগান্তরকে জানান, সরকারি চাল মজুত করে সেই চাল ভিন্ন বস্তায় প্যাকেটিং করাটা অবৈধ। এমন কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইফুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, অনেক সময় রেশনের চাল সেনা, নৌ ও পুলিশ সদস্যরা বিক্রি করে দেন। যথাযথ কাগজ সংরক্ষণের মাধ্যমে সেই চাল সেভাবেই বাইরে বিক্রি করার নিয়ম। সরকারি বস্তা খুলে অন্য কোনো ব্র্যান্ডে বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
