বগুড়ায় এনসিপির সমাবেশ
সারজিসের সামনেই ৩ দফা মারামারি ধাওয়া, আহত ৪
পুলিশ থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে বুধবার তিন দফা মারামারি ও ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিকালে শহিদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে (পৌরপার্ক) এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। তাদের বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই লালন হোসেন জানান, আহতদের মধ্যে একজন ছুরিকাহত রয়েছেন।
আহতরা হলেন-বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার জাকির হোসেনের ছেলে জুনায়েদ হোসেন, বৃন্দাবনপাড়ার মোকাব্বের হোসেন বাদলের ছেলে তাহমীদ হোসেন, গাবতলীর হাটফুলবাড়ির শালুকগাড়ির মইনুল ইসলামের ছেলে রিয়াদ হাসান ও গাবতলীর পদ্মপাড়ার তানজিবুলের ছেলে মো. তাওহীদ। এদের মধ্যে জুনায়েদের নিতম্বে তিনটি ও হাতে দুটি ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোয়া ৫টার দিকে সারজিস আলম ও কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। এনসিপির নেতাকর্মীরা বাধা দিলে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। তিন দফা তাদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পালটাধাওয়া চলে। সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার সময়ও দুপক্ষের মধ্যে মারামারি চলছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির সময় মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন এনসিপির নেতারা। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল ইসলাম, সাদিয়া ফারজানাসহ অন্যরা এক মিনিটের মতো করে বক্তব্য দেন। আর প্রধান অতিথি সারজিস আলম চার মিনিটের মতো বক্তব্য দিয়ে দ্রুত মঞ্চ থেকে নেমে যান। পরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের সাতমাথা প্রদক্ষিণ করা হয়। মিছিলের সামনে-পেছনে প্রচুর পুলিশ ছিল।
এনসিপির বগুড়া জেলার অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাব্বির বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। এনসিপি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় এক নেতার কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের কিছু নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ সময় হাতাহাতি হয়েছে। পরে তাদের প্রতিহত করে সমাবেশস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর এনসিপির সমাবেশে প্রতিপক্ষের লোকজন এসেছিলেন। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কাউকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনা আমরা দেখিনি।
স্থানীয়রা জানান, গণহত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে জেলা এনসিপি বুধবার বিকালে শহিদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি দেয়। জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির তাদের কর্মসূচি সফল করতে এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানান। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের জেলা মুখপাত্র মো. আইয়ুব একই স্থান ও সময়ে পালটা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এনসিপির ব্যানারে গণহত্যার বিচারের দাবিতে যে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে সেখানে সারজিস আলম আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই কি তাদের পুনর্বাসন করতে চাইছেন। এনসিপি নেতাদের নিয়ে কি জামায়াতের বিটিম তৈরি করতে চাচ্ছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিপ্লবী চেতনার ধারক-বাহক হয়ে এ অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছি।
এনসিপির বগুড়া জেলার অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাব্বির বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আজ বগুড়ায় এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। এনসিপি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় এক নেতার কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের কিছু নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ সময় হাতাহাতি হয়েছে। পরে তাদের প্রতিহত করে সমাবেশস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। মো. আইয়ুব বলেন, এনসিপির কর্মসূচি চলাকালে আমি সেখানে যাইনি। তবে শুনেছি, তাদের চার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
খুনি হাসিনা ও তার সন্ত্রাসী প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারে না-সারজিস আলম : সমাবেশে সারজিস আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ শুধু পিলখানা হত্যাকাণ্ড নয়; শুধু হেফাজতের মাহফিলের হত্যাকাণ্ড নয়, শুধু ২৪ জুলাইয়ে হাজারের অধিক ভাইবোনকে খুন করেনি বরং আওয়ামী লীগ নির্বিচারে নামে-বেনামে অসংখ্য মানুষকে গুম-খুন করেছে। খুনি হাসিনা ও তার সন্ত্রাসী প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারে না। আওয়ামী লীগ শুধু রক্তের ওপর দাঁড়িয়েছিল ব্যাপারটি এমন নয়, গোটা দেশে জেলার নাম ধরে ব্যক্তির নাম ধরে দলের নাম ধরে বৈষম্য করেছে। আওয়ামী দালালদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক যুথী অরণ্য প্রীতির সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বত্তৃদ্ধতা করেন যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম পলক, আবদুল্লাহ আল মুহিন, নাজমুল হক, জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়া জেলা সদস্য সচিব সাকিব খান, ওয়ারিয়র্স জুলাইয়ের আহ্বায়ক মো. মুশফিক, ‘শহীদ’ সেলিম মাস্টারের ভাই উজ্জ্বল হোসেন ও জুনায়েদ আহমেদ রাতুলের ভগ্নিপতি আমীর হামজা প্রমুখ। সমাবেশ শেষে সারজিস আলমের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
