বাজারে আসার প্রাক্কালেই দিনাজপুরের বিখ্যাত ‘বেদানা লিচু’ ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দিনাজপুরের লিচু চাষি ও আগাম বাগান কেনা লিচু ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় দিনাজপুরের এই সুস্বাদু লিচু আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসাবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে।

লিচুর রাজধানী হিসাবে খ্যাত দিনাজপুরে উৎপন্ন হয় বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, মোজাফ্ফরপুরী, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, কাঁঠালী, হাড়িয়াসহ প্রায় ১০ থেকে ১২টি জাতের লিচু। এসব লিচুর মধ্যে স্বাদে, গন্ধে, রসে ও মিষ্টতায় দিনাজপুরের ‘বেদানা লিচু’ অতুলনীয়।

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক ড. এজামুল হক বলেন, দিনাজপুর সদর উপজেলার মাশিমপুর, শিকদারগঞ্জ, মহব্বতপুর, উলিপুর ও বিরল উপজেলার মাধববাটী, রবিপুর গ্রামে উৎকৃষ্ট মানের বেদানা লিচু পাওয়া যায়। অন্য জাতের লিচুর শাঁসের পরিমাণ যেখানে ১৯ শতাংশ, সেখানে বেদানা লিচুর শাঁসের পরিমাণ ২৮ শতাংশ। অন্য জাতের লিচুর খোসা খুললে লিচুর রস মাটিতে বা শরীরে গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বেদানা লিচুর খোসা ছাড়ানোর পর রস মাটিতে বা শরীরে পড়ে না। অনন্য এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে বেদানা লিচুর জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দেশের সর্বত্র।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে দিনাজপুরে শুরু হয়েছিল লিচুর চাষ। পরবর্তীতে ১৯ শতকের শেষে ও ২০ শতকের শুরুতে দিনাজপুরে বেদানা লিচুর চাষ শুরু হয়। দিনাজপুরে ৫ হাজার ৪৮৪ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বেদানা জাতের লিচু চাষ হচ্ছে ৩০৮ হেক্টর জমিতে। সুস্বাদু এই লিচুর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক ৬৯ টন। সেই হিসাবে দিনাজপুরে বেদানা লিচু উৎপন্ন হয় ১ হাজার ৭৫৫ টন।

আগাম বাগান কেনা লিচু ব্যবসায়ী মাজেদুর রহমান বলেন, এবার ২৫টি লিচুর গাছ কিনেছি। এর মধ্যে ১৯টি গাছই বেদানা লিচুর।

একই এলাকার লিচু চাষি মালেক বাবু বলেন, এমনিতেই প্রতি বছর বেদানা লিচুর দাম ও চাহিদা বেশি থাকে। আর এবার জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় দাম ও চাহিদা আরও বাড়বে। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি।