Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, করোনা টিকার বিরূপ প্রভাব

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্যাবিস বা খোসপাচড়া রোগ। বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছোঁয়াচে এই রোগে ব্যাপক সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী আসছে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিতে রাজশাহীর বিভিন্ন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে। আবার আক্রান্ত অনেকেই রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভিড় করছেন চিকিৎসার জন্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্যাবিস বা ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ বেড়েছে রাজশাহীতে। গত দেড়-দুই মাস ধরেই স্ক্যাবিস ছড়িয়েছে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে। তবে বর্তমানে প্রকোপ বাড়ায় স্বাস্থ্য বিভাগেরও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. রোজী আরা খাতুন বলেন, স্ক্যাবিসের প্রকোপ জানার জন্য আমরা অধিদপ্তরের অধীন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিস মাঝে মাঝেই হয়। তবে আবহাওয়া বদলজনিত পরিস্থিতিতে প্রকোপ বাড়ে। যেহেতু স্ক্যাবিস ত্বকের একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই বসবাসের জায়গা বিশেষ করে ঘরবাড়ি, মেস, কর্মস্থল, কারাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্ক্যাবিস সংক্রমণ ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে। রাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাসিউল আলম হোসেন জানান, আগে যেখানে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী আসতেন স্ক্যাবিসের সমস্যা নিয়ে। এখন দৈনিক শতাধিক শিক্ষার্থী আসছেন। তিনি আরও জানান, আক্রান্ত অনেকেই বলছেন, করোনার টিকা গ্রহণের পর থেকে অনেকের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন প্রতিষেধকের কার্যকারিতা কমে গেছে। সাধারণ সমস্যায় ভালো মানের ওষুধ খেয়েও কাজ হয় না। তবে স্ক্যাবিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে করোনার টিকার প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে কি না-খুঁজে দেখা দরকার। ডা. মাসিউল আলম হোসেন আরও জানান, বিগত ৩৫ বছরের বেশি সময় আমি সফলভাবে চর্মরোগের চিকিৎসা করছি; কিন্তু দৈনিক এত সংখ্যক স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগী এখন আসছেন যা আগে কোনো দিন দেখা যায়নি। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়েত করিম বলেন, আমদের হলের একটি ব্লকের অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। স্ক্যাবিসের কারণে সারাক্ষণ শরীর চুলকায়। পড়াশোনা করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রাজশাহী মেডিকেলের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিউলি রানী পাল বলেন, আমাদের পরিবারের চারজনই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। স্ক্যাবিস খুবই অস্বস্তিকর একটি চর্মরোগ। সারাক্ষণ শরীর চুলকায়। চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বেরিয়ে যায়।

অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহা. আলমগীর রেজা জানান, স্ক্যাবিস বা খোসপাচড়া রোগ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলে। রাজশাহী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর এমনকি কুষ্টিয়া এলাকা থেকেও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভিড় করছেন। স্ক্যাবিসে আক্রান্ত শিশুরাও আসছে আউটডোরে। যদিও শিশু আক্রান্তের সংখ্যাটা কম। তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগীদের সংক্ষিপ্ত হিস্ট্রি নিয়ে দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে যেসব মাদ্রাসায় একসঙ্গে অনেক আবাসিক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন, ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী, কারাগারের হাজতি কয়েদি, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

এই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, পরিবারের কেউ একজন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে সাধারণ চুলকানি বলে চিকিৎসা নেন না। ফলে ততদিনে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই ওষুধের কোর্স কমপ্লিট না করার কারণে আবার আক্রান্ত হচ্ছেন। অসচেতনতার কারণে স্ক্যাবিস নিরাময়ের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেহেতু স্ক্যাবিস ত্বকে ছড়ায় ফলে সহজেই আরেকজনের ত্বকে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এজন্য পরিবারের একজন ওষুধ ব্যবহার করলে বাকি সবাইকে একই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। আর ত্বক ভেজা রাখা যাবে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম