কুমিল্লায় মিলল প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
কুমিল্লা ব্যুরো ও সদর দক্ষিণ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের ধর্মপুরে বসতভিটার মাটি খননের সময় লাল ইটের প্রাচীন দেওয়ালের সন্ধান মিলেছে। দেওয়ালটি শতবর্ষ, এমনকি এরও আগে নির্মিত কোনো জমিদার আমলের বাসস্থান বা প্রশাসনিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি ধর্মপুরের চারাবাড়ি এলাকায় প্রাচীন ওই দেওয়াল ও স্থাপনার সন্ধান মেলে। লালমাই পাহাড়ের দক্ষিণ অংশে কথিত বালাগাজীর মুড়ায় এ পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে পরিচালিত এ অনুসন্ধানের ফলে ছোট ছোট প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বেড় হয়ে আসতে শুরু করেছে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেওয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে, যা হয়তো কোনো স্থাপনার কর্নার। খননকালে মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরোবিশিষ্ট তিন-চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পর সন্ধান মেলে প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী দেওয়ালের এ ধ্বংসাবশেষ। বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ লালমাই ময়নামতীতে আবিষ্কৃত হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহার, আনন্দবিহার, ভোজবিহার, ইটাখোলা ও রূপবান মুড়ার প্রাচীন মন্দির ও বিহারের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান টিম। স্থানীয় মো. জসিম উদ্দিন জানান, বাড়ি নির্মাণ শুরুর জন্য জমির মাটি শ্রমিকদের দিয়ে সমান করাচ্ছিলাম। এ সময় শ্রমিকদের হাতে থাকা কোদালের কোপে উঠে আসে শক্ত ইটের গাঁথুনি। ইটগুলো ছিল আকারে বড়, অনেকটা মোগল আমলের স্থাপনায় ব্যবহৃত ইটের মতো। বারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা চাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানকার সব নিদর্শন সংরক্ষণ করুক।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তারের ধারণা, ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করেন এবং সমতল অঞ্চল বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। এ অঞ্চলটি ত্রিপুরা ও বাংলার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল।
কুমিল্লা ময়নামতী মিউজিয়ামের কাস্টডিয়ান মো. শাহিন আলম বলেন, এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে। বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারাবাড়ি নামে পরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির উপরিভাগে প্রচুর চারা অর্থাৎ মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এ নামকরণ হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলমের অনুমোদন ও নির্দেশনা নিয়ে এ বছর বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
