থানচিতে খেয়াং নারী হত্যাকাণ্ড
রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ
তিন পার্বত্য জেলায় তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ * বিভ্রান্তি না ছড়াতে আহ্বান জানালেন জেলা প্রশাসক
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বান্দরবানের থানচিতে খেয়াং সম্প্রদায়ের নারী চিংমা খেয়াংয়ের (২৯) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য থানচি থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী সন খেয়াং বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। নিহতের স্বজন যেভাবে এজাহার দিয়েছেন, সেভাবেই মামলাটি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ কাওছার। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে খেয়াং নারীর মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। এদিকে ধর্ষণের পর এই নারীকে হত্যা করা হয়েছে-এমন অভিযোগ করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু তালেব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আবদুল করিম এবং জেলা প্রশাসন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ভিকটিমের বিষয়ে তৎপর রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্মিলিতভাবেই এটির সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এটি যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে জড়িত হত্যাকারীদের আমরা বিচারের আওতায় আনব। এখন পর্যন্ত বলতে পারছি না মৃত্যুর রহস্যটা আসলে কী। ময়নাতদন্তে রিপোর্টের পর বলতে পারব। তখন প্রয়োজনে আবার মিডিয়ার মুখোমুখি হব। তবে এটি নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়, সেদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ কাওছার বলেন, লাশের চোখে-মুখে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিহতদের স্বজনদের সম্মুখে পুলিশের নারী সদস্যরা লাশের সুরতহাল ও মামলার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। চিকিৎসকের তদন্ত রিপোর্টের পর হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, রোববার সকালে জুমচাষের জন্য পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে যান তিন্দু ইউনিয়নের মংখ্যংপাড়া এলাকার বাসিন্দা সন খেয়াংয়ের স্ত্রী চিংমা খেয়াং। দুপুর পেরোনোর পরও বাড়িতে না ফেরায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে পাহাড়ে খুঁজতে যান। একপর্যায়ে জঙ্গলের ভেতরে পাহাড়ি ঝিরির পাশে লাশ দেখতে পান।
বান্দরবানে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মিছিল-সমাবেশ : থানচিতে খেয়াং সম্প্রদায়ের নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পাহাড়ি সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার বিকালে শহরের শহিদ আবু সাঈদ মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে বাংলাদেশ খেয়াং কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, খেয়াং স্টুডেন্ট ফোরাম, বান্দরবানস্থ আদিবাসী ছাত্রসমাজ, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক, সিএইচটি ওমেন নেটওয়ার্ক, উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, দুর্বার নেটওয়ার্ক ও সুজনের উদ্যোগে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে শত শত নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মানবাধিকারকর্মী লেলুং খুমী বলেন, থানচিতে খেয়াং নারীকে নির্মমভাবে হত্যা আমাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। আমরা এই আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে চাই না।
খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ মিছিল : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি আদালত সড়ক হয়ে শাপলা চত্বরে এসে সমাবেশ করে। এতে অংশ নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, এর আগে ১৮ এপ্রিল এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। আমরা কেন নিশ্চুপ হয়ে আছি? শিক্ষার্থী কবিতা চাকমা বলেন, এক খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। উনি তিন সন্তানের জননী। তার একটি ১৮ মাসের বাচ্চাও রয়েছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আকাশ ত্রিপুরা।
রাঙামাটিতে চার সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থনপুষ্ট চার সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। তারা অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মঙ্গলবার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
