Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

এএসপি পলাশের মায়ের আহাজারি

বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখি, কী অভিমানে আমাকে ছেড়ে গেল

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো, গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তোরা আমার বাবার কাছে নিয়ে যা, আমি একটু ছুঁয়ে দেখি। কী অভিমানে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের চন্দগাঁও র‌্যাব-৭ ক্যাম্পে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহার মা আরতী সাহা। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে প্রলাপ করছিলেন সন্তান হারা মা। সন্তানের শোকে তার চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় র‌্যাব-৬-এর কমান্ডিং কর্মকর্তা কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে পলাশের লাশ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় মায়ের পাশাপাশি আর্তনাদ করেন বড় বোন রমা সাহা, মেজো ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী। বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, পর শেষকৃত্যের জন্য পলাশের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পৌরসভার পাড়কোনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দুপুরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

নন্দলাল বলেন, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে পলাশ ছিল সবার ছোট। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে। সাবরেজিস্ট্রার হিসাবে চাকরি শুরু করে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। চাকরি জীবনে সে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে থেকে সে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৭-এ দায়িত্ব পালন করছিল। দুই বছর আগে ফরিদপুরের সুস্মিতা সাহাকে বিয়ে করে। বিয়ের দুই মাস পর থেকেই শুরু হয় সংসারে অশান্তি। নন্দলাল আরও বলেন, পলাশ চেয়েছিল মা? ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী এটি মেনে নিতে পারছিল না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেত। বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারত না। এ নিয়েই মাঝে মাঝে ঝামেলা লেগে থাকত। আমি ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যখন পলাশের একের পর এক চাকরি হচ্ছিল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকরি করব না উদ্যোক্তা হব। তাই ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও র‌্যাব-৭ ক্যাম্পে বুধবার দুপুরে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এজন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ। তার রক্তাক্ত লাশের পাশেই পড়েছিল চিরকুট। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।

মামলা হচ্ছে অপমৃত্যুর : পলাশের আত্মহত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব হোসেন জানিয়েছেন, পারিবারিক অশান্তির জেরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম