Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

নির্দেশনা না পেয়ে হাত গুটিয়ে ইআরডি

তিস্তা মহাপরিকল্পনার অগ্রগতি নেই

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পরও আশাজাগানিয়া কিছু হয়নি * এটি নিয়ে কাজ চলছে -ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ * ভারত-চীনকে বাদ দিয়ে হলেও এর বাস্তবায়ন জরুরি -শফিকুল ইসলাম বেবু, আহ্বায়ক, কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটি

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আট মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি অন্তর্বর্র্তী সরকার। ফলে যে তিমিরে ছিল সেখানেই আটকে আছে রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের এই মহাপরিকল্পনা। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে এর একটি সুরহা হবে বলে মনে হলেও এখনো আশাজাগানিয়া কিছু হয়নি। কেননা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় হাত গুটিয়ে বসে আছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংস্থাটি বলছে, ভারত বা চীন কোনো দেশই এই মুহূর্তে পরিকল্পনাটি নিয়ে আগ্রহের কথা জানায়নি। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও এটি নিয়ে কাজ করতে বলা হয়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে ইআরডি কিছু করতে পারে না। এটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক সরকার থাকলে নানা টানাটানি থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, তাই এ নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা সহজ হবে। কিন্তু আমাদের কাছে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই আমরা বসে আছি।

সম্প্রতি যুগান্তরের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে সরকারের ভাবনা আছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর আগে চীন একটি পরিকল্পনার খসড়া জমা দিয়েছিল। সেটি কোনো প্রকল্প ছিল না। আমরা এই মহাপরিকল্পনার বিষয়ে কাজ করছি। তবে ভারত যে পরিমাণ পানি দেয় সেই পানি দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটুকু সফলতা আসবে এসব বিষয়ও দেখা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত, চীন না অন্য কোনো দেশকে দেওয়া হবে সেটির বিষয়েও এই মুহূর্তে বলা যায় না, দেখা যাক।

জানা যায়, চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের ভাগ্য। এটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে ভাসাবে না গ্রামগঞ্জের জনপদ। সারা বছর নৌ চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যাবে। এতে আছে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুপাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন। নৌ-বন্দর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পাড়ে থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার গল্প শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া পরিকল্পনাটিতে কী আছে আমি নিজেও যেমন জানি না এবং দেশের জনগণও সম্ভবত জানেন না। তবে তিস্তা পারের মানুষকে বাঁচাতে পরিকল্পনাটির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। এক্ষেত্রে এটি নিয়ে যেহেতু ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এই দুটি দেশকে বাদ দিয়ে হলেও বাস্তবায়নের দিকে যাওয়া। প্রয়োজনে অন্য কোনো দেশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

সূত্র জানা যায়, প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার রাজাহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত ৫ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। চীনের হোয়াংহো নদীকে এক সময় বলা হতো চীনের দুঃখ। প্রতিবছর ওই নদীর পানি ভাসিয়ে দিত শত শত মাইল জনপদ। ভেঙে নিয়ে যেত বহু গ্রাম-পথ-ঘাট। নদীশাসন করায় (পরিকল্পিত ড্রেজিং) চীনের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। হোয়াংহো এখন হয়ে গেছে চীনের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। হোয়াংহোর মতোই এখন তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার প্রাথমিক প্রস্তাব করা হয়। তখনকার সরকার চীনের সেই প্রস্তাবনার আলোকেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছিল।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনের একটি বিস্তারিত স্টাডি জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখনো দেয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ মহাপরিকল্পনার বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও পায়নি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আপাতত কোনো কাজও করা হচ্ছে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম