Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচু রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে

টসটসে ছোট বিচির সুস্বাদু এ লিচু সংগ্রহে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ

Icon

এ টি এম নিজাম, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচু রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের যে দিকেই তাকানো যায় শুধু লিচু আর লিচু। মৃদুমন্দ বাতাসে গাছে থোকায় থোকায় দুলছে ছোট বিচির টসটসে সুস্বাদু এ লিচু। লিচুর ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা মঙ্গলবাড়িয়াসহ আশপাশের গ্রাম। পাকা লিচু সংগ্রহে এখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন পাইকার-ক্রেতাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লিচু-রসিক লোকজন। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ লিচু রপ্তানি হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতে দেশের দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন। ৭০০-৮০০ টাকা শ লিচু বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের টার্গেট এবার ১০ থেকে ১১ কোটি টাকার লিচু বিক্রির।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের তরুণ লিচু ব্যবসায়ী ছফির উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, লিচু চাষ তাকে আত্মকর্মসংস্থানের অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে। তার বাড়ির আঙিনাজুড়ে ৫০০-৬০০টি লিচু গাছ ও নার্সারি রয়েছে। লিচু ও চারা বিক্রি করে তার বছরে সাত-আট লাখ টাকার মতো আয় হয়। লিচুর ফুল আসার সময় তিনি মৌমাছি চাষ করেন। এ মৌসুমে তিনি ৬০-৬৫ কেজি মধু উৎপাদন করেছেন।

ছফির উদ্দিনের মতো আরও অনেক বেকার তরুণ এ লাভজনক লিচু ও মৌমাছি চাষ করছেন। গ্রামের লিচু পাইকার রাজিব মিয়া জানান, এবার তিনি গাছ থেকে ১০ লাখ টাকার লিচু কিনেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে ১৫-১৬ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ হাইস্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, তার বাড়িতেও ৭০-৮০টি লিচু গাছ রয়েছে। এগুলো তার পরিবারের বাড়তি আয়ের উৎস। বলতে গেলে লিচু বিক্রির টাকা দিয়েই তিনি সংসারের সারা বছরের খরচ চালান। লিচু গাছগুলোকে তিনি সন্তানের মতোই যত্ন করে বড় করেছেন।

সত্তরোর্ধ্ব পাইকার ইসলাম উদ্দিন জানান, ৫০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করে তার জীবনে সচ্ছলতা এসেছে। একসময় তিনি এখানকার লিচু সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে গরুর গাড়ি, নৌকা ও ট্রেনে পাঠাতেন। এখন মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু গাড়ি হাঁকিয়ে গ্রামে এসে লোকজন সংগ্রহ করছেন।

জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে দুই শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে। এছাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় এবং রাস্তার দুপাশজুড়ে শ শ লিচু গাছ রয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এসব লিচুগাছ ও বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ২০০ বছর আগে চীন থেকে এক ব্যক্তি এ জাতের লিচুর চারা প্রথমে গ্রামে নিয়ে আসেন। এরপর ধীরে ধীরে গ্রামজুড়ে বড় আকৃতির সুস্বাদু জাতের এ লিচু বাগান গড়ে ওঠে। এ জাতের লিচুর সুখ্যাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর লিচুর জাতটিও মঙ্গলবাড়িয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার এখন লিচু চাষের আয়কেই জীবিকা নির্বাহের ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাদিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রসে টসটসে, মিষ্টি ও সুঘ্রাণের কারণে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জাতের লিচুর চারা এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ ও রপ্তানি হচ্ছে।

পাকুন্দিয়া লিচু

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম