Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কমলগঞ্জে পর্যটনস্পটে ভ্রমণপিপাসুরা

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে উপচে পড়া ভিড়

Icon

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানগুলোয় এখন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব পর্যটনকেন্দ্র।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে, চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৯৪৬ জন পর্যটক প্রবেশ করেন। তাদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৫৭০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের পরদিন থেকে উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে অত্যধিক পর্যটকের কারণে লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী কর্মীরা। এদিকে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন।

ঈদের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝরনাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়বেষ্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলাসমৃদ্ধ মনিপুরী ললিত কলা একাডেমি, প্রকৃতির পূজারি খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা, গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এসব স্থানে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আসিফ বলেন, অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান এই জেলা। যদিও আবহাওয়া অনেক গরম, তবুও ভালো লেগেছে। সুন্দর সবুজ পরিবেশ।

সাতক্ষীরা থেকে ঘুরতে আসা তান্নী হাসান বলেন, আজকের ভ্রমণটি আমার খুব ভালো লাগছে। মনোমুগ্ধকর এবং সবুজের অরণ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছে। সিলেট থেকে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা মিলি আক্তার বলেন, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে নির্ভাবনায় সময় কাটাতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লাগছে।

এদিকে পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা সাজু মারচিয়াঙ, নুরুল মোহাইমিন মিল্টন ও কয়েকজন পর্যটক বলেন, এখানে বন্যপ্রাণীর দেখা পেতে পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন। শহরের লোকজন বনের গাছগাছালি ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি উপভোগ করেন। বিশেষত ছুটির সময়ে অত্যধিক পরিমাণে পর্যটক, দলবদ্ধ মানুষের হইহল্লোড়, যানবাহনের হর্নের কারণে বনের মধ্যে বিচরণ করা বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। উদ্যানের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সুরক্ষার জন্য তারা পর্যটক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কাজী নাজমুল হক বলেন, প্রচুর পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। আগত পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্ন্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সেজন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি সিএমসির সদস্যদের তদারকি, সিপিজির সদস্য ট্যুরিস্ট গাইডরা রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম দায়িত্ব পালন করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেকসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে চলমান রয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবীর বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া আমি নিজেও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছি।

মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি পর্যটন স্পর্টে আমাদের পুলিশ আছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম