সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ চান বিচারপ্রার্থীরা
এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি -রেজিস্ট্রার জেনারেল * সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিলেটের জৈন্তা এলাকার আছদ্দর আলী (৫৬) জমিসংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। এ মামলার আপিল শুনানি করতে গিয়ে দুই বছর ঢাকায় আসা-যাওয়া ও অন্যান্য বাবদ তার অন্তত পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। আছদ্দর আলী জানান, সিলেট শহরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থাকলে হয়তো এতো হয়রানির শিকার হতেন না। সিলেটের আছদ্দর আলীর মতো এমন শত শত বিচারপ্রার্থীকে প্রতিদিন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উচ্চ আদালতে আসতে হচ্ছে মামলার জন্য। বিচার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আক্ষেপ ও হতাশার জায়গা আছে। তাই বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সহায়ক হবে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ, সময় ও খরচ কমবে বলে মনে করেন বিচার সংশ্লিষ্টরা। তবে এজন্য সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজন হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে বিভিন্ন বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পালটে যাবে- এমন যুক্তিসহ নানা কারণ দেখিয়ে সে সময় ঢাকায় আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও হয়। পরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ৫ আগস্টের পরে পরিবর্তিত বাংলাদেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ বিভাগের সংস্কারের জন্য কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ। রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করে কমিশন। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনেরও সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন।
গত ৩ জুলাই ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকলেও দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। কমিশনের এক বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে বিচারপতিরা সময়ে সময়ে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতেন। এর পরিবর্তে এখন বলা হচ্ছে যে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে, তবে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নির্ধারিত হাইকোর্ট বিভাগের এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে।’ এজন্য সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদে সংশোধন প্রয়োজন হবে। এদিকে হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গত ৭ জুলাই প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা আবেদনটি হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের (বিচার) কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। সম্প্র্রতি হাইকোর্ট ডিভিশনের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরের সম্ভাবনার কথা আলোচনায় এসেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। এতে আইনজীবী তাঁর পাঁচটি যুক্তি উল্লেখ করেছেন। হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থাপনের উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আইনজীবীরা। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমেদ ভূঞা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের প্রস্তাবনা দিয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। এটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আন্দোলন করে লাভ কি। এ ব্যপারে প্রধান বিচারপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরকম কোনো আবেদন আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।
সাবেক জেলা জজ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহজাহান সাজু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সময় ও খরচ কমবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে, এটা করা উচিত আমি মনে করি। তবে, এটা করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যে বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হবে- প্রথমে সেটাকে আলাদা প্রদেশ ঘোষণা করতে হবে। সেখানে স্বাধীন হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে ভারতের মতো। আলাদা প্রদেশ ঘোষণা না করে যদি হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হয়- তাহলে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
