দ্বিতীয় দফায় নিলামে তুলতে অনাগ্রহী
এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি কাস্টমসের গলার কাঁটা
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক সংসদ-সদস্যদের (এমপি) শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ২৪টি বিলাসবহুল গাড়ি এখন কাস্টমসের গলার কাঁটা। প্রথম দফায় এসব গাড়ি নিলামে তোলা হলেও উপযুক্ত দাম পাওয়া যায়নি। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে দ্বিতীয় দফায় নিলামে তুলতে অনাগ্রহী কাস্টমস। অন্যদিকে বন্দরের শেডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় গাড়িগুলোর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে, এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করেও কূলকিনারা করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সর্বশেষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে উপদেষ্টা পরিষদে সারসংক্ষেপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক সংসদ-সদস্যদের আনা গাড়িগুলো নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ২৪টি গাড়ির মধ্যে ১০টির বিড পড়েনি। বাকি ১৪টি গাড়ির যে বিডমূল্য পড়ে, তা সংরক্ষিত মূল্যের সর্বনিম্ন দশমিক ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ। গাড়িভেদে দাম ওঠে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আখতারউজ্জামানের আনা ল্যান্ড ক্রুজার জেডএক্স মডেলের গাড়িটি সংরক্ষিত মূল্য ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করে কাস্টমস। নিলামে এ গাড়ির দাম ওঠে মাত্র এক লাখ টাকা।
এ অবস্থায় গাড়িগুলো দ্বিতীয় দফা নিলামে না তুলে রাজস্ব ঝুঁকি ও আইনি বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়ে ১১ মার্চ এনবিআরকে চিঠি দিয়ে দিকনির্দেশনা চায় চট্টগ্রাম কাস্টমস। চিঠিতে বলা হয়, প্রথম দফায় পণ্যের বিডমূল্যের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ মূল্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় নিলাম করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয় দফা নিলামে প্রথম দফার তুলনায় কম দাম পাওয়া গেলেও দুই নিলামের সর্বোচ্চ মূল্য হাঁকানো বিডারের অনুকূলে গাড়ি খালাসের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। যাতে রাজস্ব ঝুঁকি তৈরির শঙ্কা তৈরি হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এনবিআরে সভা হয়। সেখানে জানানো হয়, গাড়ির বিডমূল্য অতি নগণ্য এবং কিছু গাড়ির বিপরীতে বিড না পড়ায় গাড়িগুলো বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সংরক্ষিত আছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে সরকারের রাজস্বহানি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। গাড়িগুলো নিষ্পত্তিতে এনবিআর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে।
বাজেয়াপ্ত পণ্য নিষ্পত্তির আদেশে বলা আছে, প্রথম নিলামে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ বিডমূল্য পাওয়া না গেলে পণ্য দ্বিতীয় নিলামে তুলতে হবে। দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলামের চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়া গেলে ওই মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের সুপারিশ করতে হবে। দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলামের চেয়ে কম মূল্য পাওয়া গেলে প্রথম নিলামের মূল্য অফার করতে হবে। সেই মূল্য পাওয়া গেলে পণ্য বিক্রির সুপারিশ করা যাবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় নিলামে পণ্য বিক্রি না হলে তৃতীয় নিলামে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় নিলামে যে মূল্য পাওয়া যাবে, সেই মূল্যেই পণ্য বিক্রির সুপারিশ করতে হবে। সূত্র জানায়, সাবেক এমপিদের গাড়ি নিয়ে বেকায়দায় আছে এনবিআর। কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোংলা বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। নিলামে উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় দুটি গাড়ি আমদানিকারক দেশ জাপানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের গাড়ি নিষ্পত্তিতে এনবিআর একা দায় নিতে চাইছে না। তাই উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাড়িগুলোর নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, সংসদ-সদস্যদের গাড়িগুলো টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের। সব গাড়ি ৩ হাজার ৩৪৬ সিসির। নিলামে প্রতিটির গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কিন্তু খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এসএম কামাল হোসেনের গাড়ির দাম ওঠে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া রংপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামানের গাড়ির দাম ওঠে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সাবেক সংসদ-সদস্য মজিবুর রহমানের গাড়ির সর্বোচ্চ দাম ওঠে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ সাদিকের গাড়ির দাম ওঠে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শাম্মী আহমেদের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা, তারানা হালিমের গাড়ি ৫ লাখ টাকা, নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা, ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামানের গাড়ির দর ওঠে ৫ লাখ টাকা। যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য তৌহিদুজ্জামানের গাড়ি ২০ লাখ টাকা, গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শাহ সারোয়ার কবীরের গাড়ি দেড় কোটি টাকা, জান্নাত আরা হেনরীর গাড়ির দাম ওঠে পাঁচ লাখ টাকা।

