Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা ৪ পুলিশ প্রত্যাহার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বৃহস্পতিবার রাতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মোবাইল ফোন ও টাকা খোয়ান আহমদ ওয়াদুদ নামের এক ব্যক্তি। মোহাম্মদপুর থানার পাশেই এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান ভুক্তভোগী। তবে অভিযোগ উঠেছে, সহযোগিতার পরিবর্তে থানায় গিয়ে দায়িত্বরত পাঁচ পুলিশ সদস্যের হেনস্তার শিকার হন আহমদ ওয়াদুদ। হেনস্তাকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসানের নামও রয়েছে।

ভুক্তভোগী আহমদ ওয়াদুদ পুরো ঘটনা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি স্বল্প সময়েই নেট-দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শীর্ষ কর্তারা। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় পুলিশের চার সদস্যকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়। তারা হলেন-এসআই জসিম উদ্দিন, এএসআই আনারুল, কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও মো. নুরুন্নবী। পুরো ঘটনা অনুসন্ধানে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আলমগীর কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগীর ফোন উদ্ধারসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীর ফোন উদ্ধার ও তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘থানায় গিয়ে হেনস্তার অভিযোগের পর পুলিশের চার সদস্যকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে ডিএমপিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো ঘটনার অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’ থানায় ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে উল্লেখ করে ডিসি ইবনে মিজান বলেন, অনুসন্ধানের পর বোঝা যাবে পুলিশের কারা জড়িত ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আহমাদ ওয়াদুদ নামে এক সাংবাদিককে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে তার কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন সড়কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানান তিনি। দায়িত্বরত ডিউটি পুলিশ সহায়তার পরিবর্তে হেনস্তা করেন তাকে। পরে তিনি যান থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের কাছে। তিনি ঘটনা শুনে ভুক্তভোগীকে বলেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই! আবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে এসআই জসিম বলেন, ‘ওখানে ছিনতাইকারীরা বসে থাকবে নাকি? আপনার কমন সেন্স নেই?’

ভুক্তভোগী ঘটনার বিবরণ দিয়ে তার ফেসবুকে ‘মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন। সেখানে ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সাথে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকা-পয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার দূরত্ব ৩ মিনিটের রাস্তা। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই।’

তিনি থানায় হেনস্তা ও ছিনতাইকারীদের পালিয়ে যেতে পুলিশের সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরেন ফেসবুক পোস্টে। ছিনতাইকারী ধরতে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ভুক্তভোগীর জামার বোতাম খোলা থাকায় ধমকও দেন এক পুলিশ সদস্য।

অভিযোগ লেখার একটি কলমও পুলিশ দেয়নি আহমদ ওয়াদুদকে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-ইউসুফ (২৬), সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)।

ওসিকে অপসারণের দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ : দায়িত্বে অবহেলা, চাঁদাবাজ, চোর চক্র ও ছিনতাইকারীদের সাথে আঁতাতের অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে অপসারণের দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেল ৫টায় মোহাম্মদপুর থানার সামনে ঐক্যবদ্ধ মোহাম্মদপুর ব্যানারে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল করে।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন বলেন, মোহাম্মদপুর থানার ওসি বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের সাথে অসদাচরণ, আইনি সহায়তা না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকে অপসারণ করছে না। তিনি মোহাম্মদপুরের মতো একটা ক্রাইম জোনে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের সাথে আঁতাত করে চলেন। যার ফলে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হচ্ছে। এত অভিযোগ, এত অসদাচরণের পরও তাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার অপসারণ না করায় আমরা স্থানীয়রা ভীত সন্ত্রস্ত।

আরেক বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমরা দীর্ষদিন যাবৎ ওসির এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছি। তিনি এ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম