Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ইসলামী ব্যাংক ফুলতলা শাখায় গ্রাহক নির্যাতন

তিন কর্মকর্তা কারাগারে মামলা ওঠাতে হুমকি

যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর

Icon

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ফুলতলা শাখার স্টোর রুমে গ্রাহকের চোখ ও মুখ বেঁধে হাতুড়িপেটা এবং প্লাস দিয়ে নখ ওঠানোর সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সংবাদ প্রকাশের পরপরই শাখার সব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ হাজেরীর মামা জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাসহ ৭/৮ জনকে অজ্ঞতানামা আসামি করে মামলা করেন। এরপরই ব্যাংকের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান, মিজানুর রহমান ও আব্দুল আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জেল্লাল হোসেন। শুক্রবার তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হয়েছে। এরপরই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ হাজেরী শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘মামলা করার পর থেকে হুমকিতে আছি। মামলা ওঠানোর জন্য বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে যে টাকা পাবে, সেটা আমরা দিতে রাজি হয়েছি। আমাদের কাছ থেকে একাধিক ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প লিখে নিয়েছেন তারা। তারপরও অমানুষিক নির্যাতন। ওই ঘটনায় জাড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করায় উলটো আমাদের হুমকিতে রেখেছে তারা। এমন অবস্থায় কী করব বুঝতেছি না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থাও খুব ভালো হচ্ছে না। আগামীকাল (আজ) এখান থেকে অন্য হাসপাতালে যাব উন্নত চিকিৎসার জন্য।’

কী ঘটেছিল সেদিন : ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ হাজেরী বুধবার খুলনা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতিবেদককে বলেন, মঙ্গলবার ফুলতলার ইসলামী ব্যাংক শাখায় আমাকে যেতে বলা হয়। বিকাল ৪টার দিকে আমি ব্যাংকে যাই। ওই সময় আমার বাবাও ব্যাংকে ছিলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাকে এজেন্ট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করার চেষ্টা করেন। আমি তাদের বলি, আমরা যদি টাকা আত্মসাৎ করতাম তাহলে এভাবে চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া আমার বাবা জমি বিক্রি করে খুব দ্রুতই এই ক্ষতিপূরণ দেবে। ইতোমধ্যে আপনারা ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। এরপরও ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার আশিক আমার হাত ধরে ব্যাংকটির স্টোর রুমে নিয়ে যান। সেখানে আমার চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলেন চার-পাঁচজন। এরপর তারা হাতুড়ি দিয়ে আমার পায়ের তালু ও হাঁটুতে পেটাতে থাকে। পাশাপাশি প্লাস দিয়ে আমার নখ ওঠানোর চেষ্টা করে। এরপর তারা স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

নির্যাতনের নেপথ্যের কারণ : নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী এএইচএম শফিউল্লাহ হাজেরীর ছেলে ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ হাজেরী। চলতি মাসে এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান এবং মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী। এ ঘটনার পর ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি টিম সেখানে যায়। পাশাপাশি দুইজন প্রিন্সিপাল অফিসার দিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। অন্যদিকে গ্রাহকদের তাগাদা এবং ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ফুলতলার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে ওঠেন। তারা এজেন্ট ব্যাংকটির মালিক শফিউল্লাহ হাজেরীর কাছ থেকে একাধিক ব্ল্যাংক চেকসহ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

ভুক্তভোগীর বাবা এএইচএম শফিউল্লাহ হাজেরী বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বিক্রির কাজ শুরু করেছি। ব্যাংকের কথা অনুযায়ী চেক ও স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর করেছি। তারপরও আমার ছেলেকে এভাবে ব্যাংকের ভেতর নির্যাতন করাটা ঠিক হয়নি।’

ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকে ছিলেন না। কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে, সেটা তিনি পরিষ্কারভাবে জানেন না। যে কর্মকর্তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম