সিলেট-সুনামগঞ্জের সমাবেশে নাহিদ
মুজিববাদের রাজনীতি দেশে চলতে দেওয়া হবে না
সিলেট ব্যুরো ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমরা মুজিববাদী-ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে রাজনীতি করেছি। মুজিববাদ এখনো নানা ছলে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের জনগণ মুজিববাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট রায় দিয়ে দিয়েছে। মুজিববাদের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশকে আর নতুন করে বিভাজিত হতে দেব না। বাংলাদেশে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সংস্কারের মাধ্যমে তা রক্ষা করতে হবে। সুনামগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষ্যে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার বেলা ২টায় শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীর নতুন বাংলাদেশে সিলেট হবে এনসিপির অন্যতম দুর্গ। সিলেটবাসী আজ তা দেখিয়ে দিয়েছেন। বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, মুজিববাদকে শুধু আইনগতভাবে মোকাবিলা করলে হবে না। মুজিববাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মুজিববাদ মানেই ফ্যাসিবাদ, মুজিববাদ মানে ৫০ বছরের বিভাজনের রাজনীতি। মুজিববাদ মানে গুম, খুন, ধর্ষণ এবং মানবাধিকার হরণের রাজনীতি। মুজিববাদের রাজনীতি হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখলের রাজনীতি। মুজিববাদ মানে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে দেশকে ভারতের হাতে বর্গা দেওয়ার রাজনীতি। আমরা এই মুজিববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি। মুজিববাদকে আমরা আর বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না। আমরা বাংলাদেশে আর নতুন করে বিভাজনের রাজনীতি হতে দেব না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে, সংস্কারের মাধ্যমে তা ধরে রাখতে হবে।
সুনামগঞ্জের সমাবেশে মো. নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-তরুণরা একদফার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিয়েছিল। আপনারা গণভবন ঘেরাও করেছেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছেন। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রকৃত বিজয়ী এদেশের সাধারণ মানুষ। আমাদের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। নতুন বাংলাদেশ, নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমরা বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছিলাম। ঠিক এভাবেই সংস্কারের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা একটা ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র দিয়ে যেতে পারি না। আপনাদের সন্তান যারা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছে, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য হলেও এই রাষ্ট্রের ফিটনেস আপনাদের তৈরি করতে হবে। এই রাষ্ট্রের মেরামত আমাদের করতে হবে। সেই রাষ্ট্র মেরামতের জন্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হয়েছে। এজন্যই আমরা আপনাদের কাছে এসেছি, মানুষের কাছে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হাওড়কেন্দ্রিক এলাকা, নদীর পানি ও কৃষির সঙ্গে মিলেমিশে মানুষের জীবনসংগ্রাম। সুনামগঞ্জের যে কোনো উন্নয়ন করতে হলে এখানকার হাওড়কে বাঁচিয়ে করতে হবে। হাওড় আমাদের জাতীয় সম্পদ। জাতীয় নাগরিক পার্টি নদী ও নাগরিকের রাজনীতি করে, কৃষকের রাজনীতি করে, সাধারণ মানুষের রাজনীতি করে। সুনামগঞ্জের হাওড় এবং নদীভিত্তিক যে সভ্যতা, সেই সুনামগঞ্জ আমরা নতুন করে গড়ে তুলব।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। উচ্চকক্ষে পিআরের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারি। ৩ আগস্ট আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র আমরা আদায় করব। বক্তব্যের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
এনসিপির সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী সুমনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অনিক রায়ের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফুল আলম আরিফ, কেন্দ্রীয় সদস্য তানভীর আহমেদ চৌধুরীসহ জেলার এনসিপি নেতারা।
সিলেটে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ : শুক্রবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, যুগ যুগ সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সিলেট বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী। ৪৭ সালে সিলেটবাসী পূর্ববঙ্গের সঙ্গে থাকার রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু সিলেটবাসীকে সেই ব্রিটিশ থেকে শুরু করে পাকিস্তান এবং আওয়ামী লীগ আমলেও ঠকানো হয়েছে। গ্যাস, বালু পাথরসহ সিলেটের খনিজসম্পদ থেকে সিলেটবাসীকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম প্রমুখ।
নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সিলেটবাসীর মূল্যবান অবদানের কথা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটিএম তুরাবসহ এই সিলেট জেলার ১৭ জন মানুষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। আমরা সেসব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এসেছি এই সিলেটে। বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি বলেন, সেখান থেকেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিশ্চিত করা হবে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি বিএনপিবিরোধী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট চলতে দেওয়া হবে না। সিলেটে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশ।
