সমন্বয় করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়
জুলাই শহীদ পরিবারের আবাসন প্রকল্প ফেরত
ঢাবির উন্নয়নসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর স্থায়ী বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করেনি একনেক সভা। খরচের হিসাব মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমন্বয় করে প্রকল্পটি এগিয়ে নেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে বিআরটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অধিকতর পর্যালোচনার জন্য ফেরত দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নসহ ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বিআরটি প্রকল্পে অসামঞ্জ্যতা, ভুল নকশা এবং অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে। সেই সঙ্গে যেসব প্রকল্পের ঠিকাদার পালিয়েছে এবং প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) গাফিলতি রয়েছে সেগুলো তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি)। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে বিফ্রিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের আট হাজার ৫৮ কোটি, বৈদেশিক ঋণ ১৪৩ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য ‘৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প’টি উপস্থাপন করা হলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কেননা এটিতে বিভিন্ন অংশের ব্যয় প্রাক্কলন, ঢাকার মিরপুরে করলে ভালো হবে, নাকি নিজ শহরে করলে ভালো হবে-ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। এটি অনুমোদন দেওয়া হবে, তবে আরো ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর। প্রকল্পটির আওতায় রাজধানীর মিরপুরে ৮শর বেশি ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা ছিল। তিনি আরও জানান, জুলাই বিপ্লবে শহীদ, আহত এবং এ সংক্রান্ত যেসব প্রকল্প নেওয়া হবে সব সমন্বয় করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে একনেক।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন করা গেলে অবকাঠামোগত দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে দুই হাজার ৮৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রী নিবাস, ছাত্রাবাস, সুইমিং, বিনোদনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তিনি জানান, ছয়টি একাডেমিক ভবন, চারটি ছাত্রী হল, পাঁচটি ছাত্রাবাস, হাউজ টিউটর ভবন ৯টি, শিক্ষক ও অফিসারদের দুটি আবাসিক ভবন, পাঁচটি প্রশাসনিকসহ অন্যান্য ভবন চারটি, জলাধার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন, খেলার মাঠ, পাবলিক টয়লেট এবং ড্রেনেজসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি খুব খুশি যে, প্রথমবারের মতো এতবড় একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে পেরেছি।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো-দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০টি (১২টি নতুন, আটটি পুনঃনির্মাণ) ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্রিট মেইনটেনেন্স ফ্যাসিলিটিজ গড়ে তোলা, ব্যয় ১৭৩ কোটি টাকা এবং গ্রামীণ স্যানিটেশন, ব্যয় এক হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। আরও আছে, বহদ্দারহাট বাড়াইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন, ব্যয় হবে এক হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন, ব্যয় এক হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি’র অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৩৪ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ব্যয় দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান, ব্যয় ৩৯৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় ১৬০ কোটি টাকা। কন্দাল ফসল গবেষণা জোরদারকরণ, ব্যয় ১০০ কোটি টাকা এবং স্মার্ট প্রিপেইড মিটারিং প্রজেক্ট, ব্যয় হবে ৭৭০ কোটি টাকা।
বিআরটি প্রকল্প নিয়ে তদন্ত হবে : বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প তদন্ত তরা হবে। ‘সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ও দানবীয়’ এ মেগা প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কারা নকশা তৈরি করেছেন, কীভাবে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, সেখানে কী কী ত্রুটি আছে এবং কারা দায়ী সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, প্রকল্প ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা হলেও এখন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা লাগবে। বাড়তি যাবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
ঠিকাদারদের বিষয়ে তদন্ত করবে আইএমইডি : পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, অসংখ্য প্রকল্প থেকে ঠিকাদাররা পালিয়েছেন। কেন এবং কত টাকা নিয়ে পালিয়েছেন সেসব খতিয়ে দেখতে আইএমইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা পিডি হিসাবে কেন ঠিকাদারদের বাড়তি টাকা দিয়েছেন, কিন্তু কাজ বুঝে নেননি সেটিরও তদন্ত হবে। আইএমইডি একনেক বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেছে। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ নয়। পুরোটা করতে গেলে আরও একটি শ্বেতপত্র তৈরি করতে হবে। আইএমইডি এসব তদন্ত করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কম বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে সেরকম হবে না। কারণ এখনকার প্রকল্পগুলো যাচাই বাছাইয়ের পরই নেওয়া হয়েছে। এগুলোর গতি ভালোই হবে।
