Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে ২০টি পাইকারি মাদকের হাট

গাঁজা ফেনসিডিল ইয়াবা মদ আসছে দেদার

বিজিবি-পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে মাদকের পাইকারি হাট। শতাধিক শীর্ষ মাদক কারবারি সীমান্ত এলাকার ২০টি স্পটের হাট নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব হাট থেকে প্রকাশ্যেই ট্রাক, পিকআপভ্যান ও অটোরিকশায় মাদক দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নখদর্পণে থাকা স্পর্শকাতর এসব সীমান্ত এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গত তিন মাসে ওই উপজেলার পাইকারি হাট থেকে মাদক পাচারের সময় ডিবি, র‌্যাব-পুলিশ ৫৮টি ট্রাক, পিকআপভ্যান, কাভার্ডভ্যান, অটোরিকশা আটক করেছে। অপরদিকে ওই সীমান্ত এলাকার ১৮টি স্পট মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ২০টি স্পট দিয়ে ফ্রি স্টাইলে মাদক প্রবেশ করছে। ৫ আগস্টের পর গত ১ বছরে মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকায় মাদকের পাইকারি হাট গড়ে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রহস্যজনক ভূমিকায় মাদকের বেচাকেনা বেড়েই চলছে।

ওই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে হাটগুলোতে মাদক আসছে। মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য সার্বক্ষণিক সীমান্তের রেখা উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বিনা বাধায় গাঁজা, ফেনসিডিল, স্কার্প, ইয়াবা, টেপেন্ডলসহ বিভিন্ন মদের বোতল আসছে।

স্থানীয়রা জানান, সদর দক্ষিণ উপজেলার সোয়াগাজী, দরিবটগ্রাম, বদরপুর ছনটিলা, যশপুর বুড়িরটিলা, কনেশতলা, সোনাইছুড়ি যাত্রাখিল মাঠ, দলকিয়া, তারা পুসকুনিপাড়, বলেরডেবা, পদুয়ারপাড়, লেকের পাড়, সুজানগর মেম্বারের বাড়ি, কানুয়ারমোড়, বিরাহীমপুর, মুড়াপাড়া-লক্ষ্মীপুর, একবালিয়া, সূর্যনগর এলাকায় মাদকের হাট বসছে। এসব এলাকার সীমান্তের ১৮টি স্পট দিয়ে দেদার মাদক আসছে। সীমান্তের এসব পয়েন্টে বিজিবির টহল কিংবা কড়া নজরদারির মধ্য দিয়ে কীভাবে এসব মাদক দেশে প্রবেশ করছে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এসব ক্ষেত্রে বিজিবি এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সূত্র জানায়, উপজেলার সোয়াগাজীর জাকির মেম্বার, মুড়াপাড়ার হান্নান মিয়া, রাজেশপুরের মনির, আবুল কাশেম ও তার ভাই আবুল হাশেম, রুবেল, বদরপুর মাজার বাড়ির স্বপন মিয়া, জিতু মিয়া, বলেরডেবার জনির ছেলে শরিফ, পদুয়ারপাড়ের শরিফ, দলকিয়ার লতু কবিরাজের ছেলে কামাল হোসেন, একই এলাকার শাহীন মিয়া, একবালিয়ার বাছির উদ্দিন, মনু মিয়া, উলুরচরের মাইকেল, সূর্যনগরের জাহাঙ্গীর, লক্ষ্মীপুরের ইল্লা, মনোহরপুরের মামুন খান, জয়নগর আদর্শ গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে কালু মিয়া, তার ভাই মনির মিয়া, মালেক মিয়ার ছেলে মনির সরদার, মন্তু মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া, সীমান্তসংলগ্ন বাড়ির মিরু মিয়া, এমনারপাড় গ্রামের ২০ মাদক মামলার আসামি মিজান মিয়া এবং তার ছেলে ২৩ মামলার আসামি জুয়েল মিয়া, একই গ্রামের শহীদ মিয়া এবং ইমান আলী, বিরাহিমপুর কানুয়ার মোড় এলাকার সাইফুল ইসলাম, জগপুরের হৃদয়, আল আমিন, দরিবটগ্রামের জামাল মেম্বার, তার ছেলে জনি, কামাল মিয়া, আবু তাহের, বগা মিয়া, ভাটপাড়ার ফারুক মিয়া, লামপুরের দেন্দা কামাল, লালবাগের রাসেল আহমেদসহ শতাধিক শীর্ষ মাদক কারবারি এসব মাদকের হাট নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও রয়েছে।

দলকিয়া এলাকার আমীর হোসেন বলেন, বিজিবির নিয়মিত টহল এবং নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এত মাদক দেশে আসে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারবারিরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ভারত থেকে বাধাহীন মাদক নিয়ে আসছে।

বলেরডেবা এলাকার হারুন মিয়া বলেন, সদর দক্ষিণের সীমান্তজুড়ে ১৬-১৭টি মাদকের পাইকারি হাট রয়েছে। ৫ আগস্টের পর এসব মাদকের হাট বেশি জমেছে। পুলিশ-বিজিবির সখ্য ছাড়া প্রকাশ্যে এমন মাদক বেচাকেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এসব এলাকার বাসিন্দারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটাই জিম্মি। মুখ খুললে জান যাবে।

কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, মাদক এবং চোরাচালান দমনে আমরা নিয়মিত টহল জোরদার করেছি। এর আগে বেশ কিছু মাদক এবং কারবারি আমাদের অভিযানে ধরা পড়েছে। সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম বলেন, মাদকের হাট যেখানে বসবে সেখানেই অভিযান চলবে। সীমান্ত এলাকায় টহল এবং নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হচ্ছে। মাদক ও চোরাকারবারিদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম